বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সৈকতে নারীকে কান ধরিয়ে উল্লাস করা যুবক ডিবি হেফাজতে

  • প্রতিনিধি, কক্সবাজার   
  • ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৩:১৬

ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এক নারীকে কান ধরিয়ে উল্লাস করা যুবককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

সৈকতে দুই নারীকে ‘মারধর ও হয়রানির’ তিনটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিও ফুটেজে থাকা যুবককে আটক করে।

যুবকটিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করেছেন ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো অনেকে।

তারা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ওই নারীদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে।

যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শুরু থেকে সক্রিয় থাকা স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা জানান, যুবকটি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নন। আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা মত ও পথের ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। যুবকটিরও আন্দোলনে অংশগ্রহণ থাকতে পারে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কে ভোলা বাবুর পেট্রল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে শুক্রবার রাতে অভিযুক্ত যুবকটিকে আটক করা হয় বলে জানান জেলা ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।

আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকায় থাকেন। তাদের আদি বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।

ফারুকুলের ফেসবুক আইডিতে এর আগে বুধবার কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ফুটেজ আপলোড করা হয়।

ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, ‘সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

‘শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে।’

অভিযুক্ত যুবক এখন সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

আযম খান নামের এক ব্যক্তি শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনটি ভিডিও ফুটেজ আপলোড করে ক্যাপশনে লিখেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরিয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়করা। কোনো নারীকে একা পেলে, কারও পোশাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে নিয়ে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণীর পরিচয় এবং কী কাজে এত রাতে, একা অবস্থান করছেন, তা জানতে চান। পরে তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি।

একপর্যায়ে যুবকরা সৈকতের ‘সামাজিক পরিবেশ’ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন।

অপর একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু কৌতুহলী মানুষ। এসব মানুষের মাঝে লাঠি হাতে নিয়ে অবস্থান করছেন কয়েকজন যুবক।

যুবকরা লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠবস করতে থাকলে ঘিরে ধরা লোকজনকে অশ্লীল ভাষায় মন্তব্য করতে শোনা যায়।

আরেকটি ভিডিও ফুটেজে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরও একজনকে দেখা যায়। সাদা পোশাকে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভুক্তভোগী তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ ও নিজের তথ্য দেন।

একপর্যায়ে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন আরেকটি ভিভিও ফুটেজে লাঠি হাতে আরেক তরুণীকে উঠবস করার নির্দেশদাতা যুবকটি।

ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে যুবকটির বিরুদ্ধে মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে তরুণীটিকে বলতে শোনা যায়, ‘উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব।’

এদিকে পুলিশের অভিযানে আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পর্যায়ের কেউ নন বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের স্থানীয় সমন্বয়করা।

আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা মত ও পথের ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের তথ্য দিয়ে স্থানীয় সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, ‘আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতা পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশা, মত ও পথের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, আটক যুবকেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তাই বলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না।’

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কেউ যদি নিজ উদ্যোগে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো কর্মসূচি নিয়ে থাকেন, সেটার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায়বদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেন এ সমন্বয়ক।

তার ভাষ্য, ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্মের বিষয়ে ব্যক্তিকেই জবাবদিহি করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর