বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছয় সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বে কে, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:৫২

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন- এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করছি আমরা।’

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে ছয়টি কমিশন করার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতিটির প্রধান হিসেবে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের একজন করে বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি গণঅভ্যুথানে শহীদদের পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সরকার প্রধান।

প্রধান উপদেষ্টা বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব তথ্য জানান।

ড. ইউনূস জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

এছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।

‘পাশাপাশি সব স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করছি আমরা।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছি।

‘এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো। এসব কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম কমিশন প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

‘কমিশনগুলোর আলোচনা ও পরামর্শ সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং এটি পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি।

‘কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ সভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্রসমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুথানের শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। আহত শিক্ষার্থী, শ্রমিক, জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ করা হতে থাকবে।’

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ তৈরি হয়েছে। সব শহীদ পরিবার এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করার জন্য দেশের সব মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’

সাম্প্রতিক বন্যায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘পুনর্বাসনের কঠিন কাজ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সবার সহযেগিতায় আমরা পুনর্বাসনের কাজটি সফলভাবে সমাধান করতে চাই।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যারা প্রতিকার পাওয়ার জন্য আমার অফিস এবং সচিবালয়ের অফিসসমূহের সামনে প্রতিদিন ঘেরাও কর্মসূচি দিয়ে আমাদের কাজকর্ম ব্যাহত করছিলেন তারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি থেকে বিরত হয়েছেন বটে; তবে অন্যত্র আবার তারা তাদের কর্মসূচি দিয়ে যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন।

‘আমি কথা দিচ্ছি, সব অন্যায়ের প্রতিকার এবং দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। আমি আবারও অনুরোধ করছি- আপনারা যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কারখানা বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হবে। আর সেটা ঠিক হবে না। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যা সমাধানের পথ আমরা অবশ্যই বের করব। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। মালিক পক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন।’

তিনি জানান, ‘সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল/সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বাংলাদেশে বিদ্যমান সব কালো আইনের তালিকা করা হয়েছে। অতি সত্বর এসব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে।

‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ বহুল আলোচিত পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির জন্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ যেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে সম্মানের সঙ্গে পরিচিত হয়। দেশের পরিকল্পনা যেন দেশের মানুষকেন্দ্রিক হয়, কোনো নেতা বা দলকেন্দ্রিক নয়।

‘যে কারণে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের চলমান এবং প্রস্তাবিত সব উন্নয়ন প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায় বিবেচনা করে বাকি কাজে ব্যয়ের সাশ্রয় এমনকি প্রয়োজনবোধে তা বাতিলের কথা বিবেচনা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘লুটপাট ও পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটা ব্যাংকিং কমিশনও গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর