নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও খুলনার সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের ছাত্র কদরুল হাসানকে।
কদরুল কলেজে পড়ার পাশাপাশি শেখপাড়া এলাকায় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পার্টটাইম চাকরি করতেন।
খুলনার লবণচরা থানার দারোগার লেনের সুলতানিয়া আহম্মেদ জামে মসজিদের সামনে থেকে বুধবার ভোরে তাকে উদ্ধার করা হয়।
লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ কুমার দাস বলেন, ‘কদরুল হাসানকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে মুসল্লিরা প্রথমে মসজিদের মধ্যে নিয়ে যান। পরে তার মাথায় পানি দেন, তবে জ্ঞান না ফেরায় পুলিশকে তারা জানান। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।’
ওসি জানান, কদরুল অজ্ঞান থাকায় বিগত কয়েক দিনে তার সঙ্গে কী হয়েছে জানা যায়নি।
পরিবারের ভাষ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টার দিকে কদরুল নগরের সোনাডাঙ্গা থানার সোনার বাংলা গলির বাসা থেকে বের হন। এরপর নগরের ময়লাপোতা এলাকায় একটি মসজিদ চত্বরে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণের প্যাকেট করেন, কিন্তু রাতে বাড়ি ফেরার পথে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী সাঈদা খাতুন সোনাডাঙ্গা ও খুলনা সদর থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
কদরুলের স্ত্রী গত শনিবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
সেই সময়ে তিনি বলেন, “আমার স্বামী গত বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে আমার স্বামী বাসা থেকে বের হওয়ার পরে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে কথা হয়। তখন সে জানায়, ‘আমি বন্যার্তদের ত্রাণের কাজে ব্যস্ত আছি। দ্রুত বাসায় ফিরব।’ পরে সে আর বাসায় ফেরেনি।
“রাত ১১টায় তাকে ফোন দিলে একবার তার নম্বর খোলা পাই, তবে ফোন রিসিভ করেনি। এরপর থেকে নম্বর বন্ধ।”
কদরুলের সন্ধানের দাবিতে গত সোমবার বিকেলে নগরের ময়লাপোতা মোড়ে মানববন্ধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কদরুলকে খুঁজে বের করার জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মিনহাজুল আবেদীন, সাজ্জাদুল ইসলাম, কদরুল হাসানের স্ত্রী সাঈদা খাতুনসহ অনেকে।
সেই সময়ে তাদের একজন বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের পতনের এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিন কদরুলের খুলনা থেকে হারিয়ে যাওয়া স্পষ্ট একটি বার্তা দেয় যে, দেশের ওপর কোনো কালো নজর পড়েছে। হাসিনা পালালেও তার দোসররা এ দেশে রয়ে গেছে। এ জন্য ছাত্র–জনতার অবস্থান স্পষ্ট।
‘যেখানে যে উপায়েই আক্রমণ হোক না কেন, যেকোনোভাবেই তা প্রতিহত করে দিতে হবে। কোনো চেয়ার দখল করে দায়িত্বহীন আচরণ করা যাবে না। প্রশাসন চাইলে তারা বের করতে পারবে।’