জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন উপাচার্য হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার মতামত তুলেছেন।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগের পর থেকে ময়মনসিংহে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য পদ শূন্য রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা চায় শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল প্রশাসন।
সম্প্রতি ফেসবুকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম পরিচালিত এক সমীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষার্থী তাদের মতামত প্রকাশ করেন। সেখানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন, সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিলে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অস্থিরতা এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য একজন শক্তিশালী নেতার প্রয়োজন, যিনি দলীয় রাজনীতি ও ক্ষমতার দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত থাকবেন।
আশিক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই মেয়াদে অবশ্যই সেনাবাহিনীর কাউকে দেয়া আবশ্যক। নইলে এই পরিবেশে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা অনেক মুশকিল হবে।’
বেশ কিছু শিক্ষার্থীর ভাষ্য, সেনাবাহিনী থেকে একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি উপাচার্য হিসেবে এলে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ছাত্র সাদেকুল শিশির বলেন, ‘সেনাবাহিনী থেকে নিয়োগ দিলে ক্ষমতালোভী ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হবে; নিয়মতান্ত্রিকভাবে সবকিছু চলবে।’
শুধু শৃঙ্খলা ফেরানো নয়, শিক্ষার্থীরা চান একজন নৈতিকতাসম্পন্ন, নির্ভীক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য, যিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত থেকে তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন।
দর্শন বিভাগের ছাত্রী হালিমা খাতুন বলেন, ‘নৈতিক, নির্ভীক, বুদ্ধিমান এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবান্ধব একজন উপাচার্য চাই।’
অনেকে মনে করেন, সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা উপাচার্য হলে ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হবে।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের ছাত্র আবু তাহের মন্ডল বলেন, ‘সেনাবাহিনী থেকে নিয়োগ দেয়া হোক, যে হবে সৎ, ন্যায়পরায়ণ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন; যে লোভী হবে না, ক্যাম্পাস উন্নয়নের জন্য মানসিকতাসম্পন্ন।’
শিক্ষার্থীদের চাওয়া, উপাচার্য এমন একজন হবেন, যিনি শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন। হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের শিক্ষার্থী রিফায়া ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই সৎ, আন্তরিক, যিনি স্টুডেন্টদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং আমাদের যৌক্তিক চাহিদাগুলো পূরণ করবেন।’
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মারুফ তার বিস্তারিত মতামত তুলে ধরে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসকে শান্ত রেখে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে হবে। তাই আমাদের উপাচার্য হিসেবে যিনি আসবেন, উনার মাঝে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি সহনশীলতা এবং ধৈর্যশীলতার মনোভাব থাকতে হবে।
‘শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার, সুবিধা, অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে চায়। তারা গণতন্ত্র পছন্দ করে এবং আমাদের উপাচার্যের অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের সেই মতামতগুলো মূল্যায়ন করতে হবে। একজন উপাচার্য গতানুগতিক নিয়ম ভেঙে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক হিসেবে আসবেন, যিনি ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে সৃষ্টি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে একটি সুশৃঙ্খল এবং প্রাণবন্ত পরিবেশে সাজাবেন ক্যাম্পাসকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা সবচাইতে বেশি যেটি অনুধাবন করছে, সেটি হচ্ছে উপাচার্য হিসেবে কোনো দলীয় কেউ না আসুক। উপাচার্য আমাদের সকলের। তাই সকলের কথাই উনি শুনবেন এবং গ্রহণযোগ্য মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রসর হবেন। শুধু শিক্ষার্থীদের কথাই মুখ্য নয়। এখানে কর্মরত আমাদের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
‘তাই সকলকে সাথে নিয়ে একজন উপাচার্য ক্যাম্পাসকে দুর্ণীতিমুক্ত, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ তৈরি করবেন। উপাচার্য যেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সাথে নিয়ে অগ্রসর হতে পারেন।’