বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহীনুল আলম।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখার মোহাম্মদ কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের অনুমোদনে অধ্যাপক শাহীনুল আলমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হলো। তিনি চার বছর এই পদে থাকবেন এবং উপ-উপাচার্য হিসেবে বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন-ভাতাদি পাবেন। বিধি অনুযায়ী উপ-উপাচার্য পদের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন ডা. শাহীনুল আলম। রাষ্ট্রপতি ও আচার্য প্রয়োজনে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
অধ্যাপক শাহীনুল আলমের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। কর্মজীবনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের গত ১৫ বছরে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
শাহীনুল আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এবং মেটাবলিক অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এমএএফএলডি/এনএএফএলডি) বিষয়ে দেশের অগ্রগামী বিজ্ঞানী।
তিনি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ২০২০ সালে ‘মেটাবলিক অ্যাসোসিয়েটেড ফ্যাটি লিভার ডিজিজের নির্ণয় এবং পরিচালনার জন্য ক্লিনিক্যাল অনুশীলন নির্দেশিকা’ গবেষণা করেন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশসহ ২৯টি দেশের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে অনেক গবেষণাপত্রে কাজ করেছেন তিনি।
স্কোপাস হিসেবে ডা. শাহীনুল এফসিপিএস (মেডিসিন) এবং ডক্টরেট অফ মেডিসিন (এমডি) করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হেপাটোলজির নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীদের সংস্থা ‘গ্লোবাল ন্যাশ কাউন্সিল’-এর সদস্য হয়েছেন অধ্যাপক ডা. শাহীনুল আলম। তিনি ২০টি থিসিস তত্ত্বাবধান করেছেন এবং পাঁচটি থিসিসের সহ-তত্ত্বাবধান করেছেন, যারা ডক্টরেট অফ মেডিসিন (এমডি) হেপাটোলজি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
খ্যাতনামা এই চিকিৎসক বিএসএমএমইউর সাতটি গবেষণা প্রকল্পের প্রধান তদন্তকারী এবং সহ-তদন্তকারী হিসেবে অনুদান পান। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনজন।
কোর্স সমন্বয়কারী এবং এমডি হেপাটোলজি কোর্সের পাঠক্রম কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে ডা. শাহীনুল বিএসএমএমইউতে ২০১১ সালে শুরু হওয়া ‘রেসিডেন্সি ভিত্তিক’ পাঠক্রমের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স কমিটির (আইকিউএসি) সদস্য সচিব হিসেবে তিনি মূল্যায়নের আয়োজন করেন এবং কোর্সটি আপগ্রেড করার সুপারিশ করেন।
বিএসএমএমইউ’র এই অধ্যাপক হেপাটোলজির ওয়ার্ল্ড জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য। তিনি বর্তমানে এলসেভিয়ার, স্প্রিংগার, ব্ল্যাকওয়েল পাবলিশিং, উইলি, স্প্রিংগার নেচারসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক প্রকাশকদের পর্যালোচনাকারী হিসেবে অবদান রাখছেন।
অধ্যাপক শাহীনুল আলম ২০০৯ সাল থেকে ঢাকার হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি ‘বাংলাদেশের ফ্যাটি লিভার রোগীদের জন্য খাদ্যতালিকাগত পরামর্শ’ বিষয়ে ফুড পিরামিডের কপিরাইট অর্জন করেন।
তিনি এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ দ্য লিভার (এপিএএসএল) ও ইউরোপীয় অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ দ্য লিভারের (ইএএসএল) সদস্য। এছাড়া ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য।
এর বাইরে দ্য স্টাডি অফ দ্য লিভার (আইএনএএসএল), ব্রিটিশ সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির (বিএসজি) সহযোগী সদস্য, ইউরোপীয় সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপির (ইএসজিই) সদস্য এবং ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপির (আইএসজিই) আজীবন সদস্য।
অধ্যাপক শাহীনুল আলম বাংলাদেশের একমাত্র চিকিৎসক যিনি বাংলাদেশে চিকিৎসা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত/নিম্ন আয়ের লোকেরা একটি বড় অস্ত্রোপচার বা হাসপাতালে ভর্তির জন্য তাদের জীবনের সঞ্চয় ব্যয় করেন এবং তা করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তিনি এই ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা করেছেন।
বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন নীতির তুলনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়নবিষয়ক বইটিরও লেখক তিনি।
১৯৯৫ সাল থেকে ডা. শাহীনুল আলম বাংলাদেশের সব পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবায় দায়িত্ব পালন করেন।
এই চিকিৎসক হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারী সার্জন হিসেবে সরকারি চাকরি শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিনের জুনিয়র কনসালট্যান্ট, শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ও মেডিসিনের রেজিস্ট্রার এবং ২০০৩ সাল থেকে বিএসএমএমইউতে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।