বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী নোয়াখালীর ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ: অক্সফ্যাম

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:৫৬

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যাদুর্গত হোসনে আরা (৩৮) নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘বন্যার সময় পরিবার নিয়ে আমরা ছাদে থাকতাম। আমাদের কাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি বা খাবার কিছুই ছিল না। টয়লেটও ডুবে গিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত সম্ভব হতো না।’

স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই জেলা ফেনী ও নোয়াখালীর ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ।

বেসরকারি সংস্থাটি মঙ্গলবার প্রকাশিত জরুরি চাহিদা নিরূপণ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যায় দুই জেলায় ধ্বংস হয়েছে ৪৮ শতাংশ বাড়িঘর। এ ছাড়াও দুই জেলার স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির সুবিধা শতভাগ অচল হয়েছে।

এতে বলা হয়, পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করায় বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর ক্ষতচিহ্ন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দুর্গতদের মধ্যে জীবিকা হারানো এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অক্সফ্যামের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ৭২ শতাংশ প্রতিদিন দুই বেলা খেতে পারছে, যা পর্যাপ্ত নয়। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় খোলা জায়গায় মলত্যাগ বাড়ছে, যা ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এসব রোগে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন।

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বন্যাদুর্গত হোসনে আরা (৩৮) নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘বন্যার সময় পরিবার নিয়ে আমরা ছাদে থাকতাম। আমাদের কাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি বা খাবার কিছুই ছিল না। টয়লেটও ডুবে গিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত সম্ভব হতো না।

‘আমরা কেবল রাতের বেলা শাড়ি দিয়ে ঘিরে টয়লেটের কাজ সারতাম। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যেত, কিন্তু এ ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এই বন্যা আমাদের সবকিছু শেষ করে দিয়েছে।’

ভয়াবহ বন্যায় ফেনীর আবদুল করিম (৫২) জীবিকা ও ঘরবাড়ি সব হারিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘এবারের মতো ভয়াবহ বন্যার পানি আগে দেখিনি।’

হোসনে আরার মতো করিমও বন্যায় পরিবার নিয়ে ঘরের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার ছোট একটি সবজির দোকান ছিল, যা তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। সেটি নষ্ট হয়ে গেছে বন্যায়। এখন সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে তাকে।

অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিষ দামলে বাংলাদেশের বন্যা সম্পর্কে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। বন্যায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ডুবে গেছে। জীবিকা হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ।

‘গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি দুর্গত জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’

গত ২০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এ বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ ১১ জেলার বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে বাস্তুচ্যুত হয় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এবং প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো, বাড়িঘর, কৃষি ও মৎস্য খাত। এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুর্গত জনগোষ্ঠীদের জরুরি ও ধারাবাহিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।

দুর্গত জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ করে জরুরিভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানি, নগদ অর্থ সহায়তা, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর প্রয়োজন। মধ্যমেয়াদে ঘরবাড়ি মেরামত, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং খাদ্য উৎপাদনে কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও টেকসই সমাধানে ওয়াশ সুবিধা (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা) নিশ্চিত করা, কমিউনিটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং আয়মূলক কার্যক্রম প্রচার করা জরুরি।

অক্সফ্যামের পক্ষ থেকে বলা হয়, বন্যার শুরু থেকেই কবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংস্থাটি। বন্যাকালে দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনা খাবার, ওরাল স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিরতণ এবং মোবাইল চার্জিং স্টেশন সহায়তা প্রদান করেছে অক্সফ্যাম।

এ মুহূর্তে অক্সফ্যাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান এবং খাদ্য সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে, তবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির অবস্থার তুলনায় তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজন মেটাতে আরও বেশি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

আশিষ দামলে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের মতো সংস্থাগুলো যদি এসব বন্যা কবলিত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে সংস্থাগুলোর অস্তিত্বই অর্থহীন। আমাদের যতটুকু আছে তা নিয়েই বন্যার্তদের সহায়তা করতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

‘বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী সময়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনঃনির্মাণ এসব ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

কীভাবে এসব বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন

বন্যার্তদের জন্য কাজ করার পাশাপাশি অক্সফ্যাম এরই মধ্যে তাদের সহায়তায় জন্য একটি জরুরি তহবিল গঠনে করছে। আপনিও চাইলে এ তহবিলে সহযোগিতা করতে পারেন।

তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে (যেমন: ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও পাহাড়ি এলাকা) সহায়তার জন্য ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়াও তরুণ শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকদের অক্সফ্যাম এ কার্যক্রমে স্বাগত জানায় এবং তাদের সহায়তা করছে। এরই মধ্যে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা প্রক্রিয়ায় তাদের যুক্ত করেছে অক্সফ্যাম।

অক্সফ্যামের মাধ্যমে বন্যার্তদের সহায়তা পাঠাতে পারেন এ লিংকের মাধ্যমে।

এ বিভাগের আরো খবর