যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশের সব খাতের শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন তথা বিটিইউসি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ওয়ার্কস ফেডারেশনের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ। পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার।
কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশে শ্রমজীবীদের কোনো কনফেডারেশন গঠিত হয়নি। ফলে ১১৫টি সেক্টরের শ্রমিকদের বিভিন্ন মৌলিক অধিকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
কনফেডারেশন সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন না হওয়ার ফলে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা, মজুরি, নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, মানবাধিকার, যৌথ দরকষাকষি, শিল্প সম্পর্ক, শোভনকাজ ও সামাজিক নিরাপত্তার অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোটের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত শ্রমিক ও যে কোনো মহামারির সময়ে কর্মরত সব শ্রমিক ও কর্মচারীদের ঝুঁকিভাতা ঘোষণা, সব সেক্টরে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য ৬ মাস প্রসুতি কল্যাণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফোরামের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শ্রমজীবীদের জন্য একটি অভিন্ন মজুরি কাঠামো থাকতে হবে, যা জাতীয় নিম্নতম মজুরি হিসাবে গণ্য হবে। অতঃপর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিটি সেক্টরে জন্য আলাদা আলাদা মজুরি কাঠামো ঘোষণা করতে হবে। এ মজুরি কাঠামো কোনোভাবেই জাতীয় নিম্নতম মজুরি হারের চেয়ে কম হবে না, তবে বেশি হতে পারবে।
বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ ফয়েজ হোসেন বলেন, প্রতিটি শ্রম সেক্টরে, জেল শহরে, শ্রমঘন অঞ্চলে শ্রমজীবীদের জন্য স্থায়ীভাবে কলোনি, আধুনিক পরীক্ষাগারসহ হাসপাতাল, উপাসনালয়, স্কুল এবং আধুনিক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র চালু করতে হবে।
ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শাহ-আলম বলেন, বেকার শ্রমজীবী, অক্ষম শ্রমজীবী, বয়স্ক শ্রমজীবী এবং অবসরকৃত শ্রমজীবীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো/বলয় গড়ে তুলতে হবে।
সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন বলেন, সব আইএলও কনভেনশন এবং শ্রমজীবীদের জন্য সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা ও পলিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং বর্তমান শ্রম আইন ও শ্রম বিধিতে উল্লেখিত শ্রমজীবীদের স্বার্থের পরিপন্থি কালো ধারা-উপধারা, বিধি-উপবিধি বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন এবং শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, বাংলাদেশের সব শ্রমজীবীদের শ্রম আইনে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানপূর্বক সবার জন্য এক ও অভিন্ন শ্রম আইন কার্যকর করতে হবে এবং ইপিজেট ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মরত সব শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় তৃণমূল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীম খাঁন বলেন, প্রতিটি শিল্প এলাকায় শিল্প সম্পর্ক উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে হবে। উক্ত কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে শিল্প সম্পর্ক প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালিত করতে হবে। পাঠ্য-পুস্তকে নবম শ্রেণি থেকে শ্রম অধিকার, মানবাধিকার ও মালিক-শ্রমিকের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে একটি অধ্যায় যুক্ত করতে হবে।
জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী জামিল বলেন, জাতীয় ত্রি-পক্ষীয় কমিটি, নিম্নতম মজুরি বোর্ড, শ্রম আদালত, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন, কেন্দ্রীয় তহবিলসহ শ্রম মন্ত্রণালয়ে যেসব কমিটি রয়েছে প্রতিটি কমিটিতে কনফেডারেশনের প্রতিনিধি অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। বিগত দিনে অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত সব কমিটি বাতিল করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মন্টু, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কুদরত-ই খোদা, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রানী খান, জাতীয় তৃণমূল শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা আক্তার ফারিন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক মনি মোহন বিশ্বাসসহ বিভিন্ন বেসিক ইউনিয়নের নেতারা।