সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার পর রোববার থেকে জেলে, বনজীবী ও পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে এই বিশ্ব ঐতিহ্য। দীর্ঘ বিরতির পর সুন্দরবনের ভেতরে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে জেলে পরিবারগুলোতে। অনুমতি নিয়ে রোববার থেকে পর্যটক ও বনজীবীরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সুন্দরবন সংলগ্ন বনজীবী ও ট্যুর অপারেটররা।
দীর্ঘদিন পর আয়-রোজগারের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সুন্দরবনকেন্দ্রিক পেশাজীবীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। কেউ নতুন করে জাল বুনছেন, কেউ পুরনো জাল মেরামত করছেন। কোথাও চলছে নৌকা-ট্রলার প্রস্তুতের শেষ মুহূর্তের কাজ। আর দেশি-বিদেশি পর্যাটক বরণে ওয়াচ টাওয়ার, ফুট ট্রেইলারসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে বনবিভাগ।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ কারণে গত ১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য জেলে ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ।
মোংলা ট্যুর অপারেটর এমাদুল হোসেন বলেন, ‘তিন মাস বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হচ্ছে। টুরিস্টদের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। বুকিং পেলে রোববার থেকে টুরিস্টদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবো।
‘তবে দেশের বিভিন্ন স্থানের বন্যার প্রভাব আমাদের মোংলায়ও পড়বে। কেননা যারা ভ্রমণে আসবেন তাদের অনেকেই এখন বন্যার কবলে। তাই গত বারের তুলনায় এবার যাত্রী কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে।’
বনজীবী বেল্লাল শেখ বলেন, ‘আমাদের এলাকার বহু মানুষ সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধ থাকার পর রোববার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জেলেরা বন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাস পারমিট নিয়ে প্রস্তুত হওয়া শুরু করেছে। রোববার ভোরেই আমরা সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হব।’
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, বনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা, বন্যপ্রাণী এবং নদী-খালে মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় প্রতিবছরের মতো এ বছরও ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। রোববার থেকে বনজীবী ও টুরিস্টরা নিয়ম মেনে অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটক বরণে ওয়াচ টাওয়ার, ফুট ট্রেইলারসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে বনবিভাগ।
সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে জানান, সুন্দরবন জল-স্থলভাগ শুধু জীববৈচিত্র্যেই নয়, মৎস্য সম্পদের আধার। সে কারণে প্রথমে সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিংয়ের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩ মাস সময় বৃদ্ধি করে বন মন্ত্রণালয়। এ সময় সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।