হত্যার হুমকির অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। তিনি বলেছেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
সোহেল তাজ বলেন, ‘অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছাত্র-জনতা একটি পরিবর্তনের জন্য শত শত প্রাণের বিনিময়ে আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এনেছে৷ এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি৷ আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধিশালী প্রগতিশীল বাংলাদেশ।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি- যেকোনো ভালো কাজ কিংবা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজের জন্য আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করা বড় একটি অংশ৷ সুশাসন পেতে হলে আইনের শাসন জরুরি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার একটি বিষয় নিয়ে এখানে এসেছি। আমাকে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রাণের ওপর হুমকি এসেছে৷’
তিনি বলেন, ‘আমি একজন কর্মঠ মানুষ। প্রতিদিন আমাকে কাজ করতে হয়। গতকাল (বুধবার) আমি যখন কাজ শেষে আমার ডিওএইচএসের বাসায় ফেরত যাচ্ছিলাম, তখন একটি মোটরসাইকেল চালক আমাকে ছায়ার মতো ফলো করেন।
‘আমি যখন সেনানিবাস দিয়ে ঢুকে পড়ি তখন তিনি আমাকে থামতে বলেন। আমি দেখি তার শার্টের মধ্যে লাল-নীল লাইট জ্বলছে। তিনি আমাকে ইশারা করছেন থামতে। আমি বুঝতে পারছিলাম না তিনি কে। সাধারণত ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এমপিরা থামায়। আমাকে থামানোর পর আমি তাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করি আপনি কে? আপনার পরিচয় কী? আমাকে কেন থামতে বলেছেন? উনি বার বার আমাকে বলছেন- আমাদের লোক আসবে। আপনাকে থামতে হবে৷’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “একপর্যায়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন- হ্যাঁ। আপনি সোহেল তাজ। এরপর আমি তাকে ফোনে বলতে শুনেছি- ‘উনি জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে ঢুকে গিয়েছেন। আপনারা এখানে এই লোকেশনে আসেন।’
আমি বার বার তার পরিচয় জানতে চাইলাম। তিনি কোনো জবাব দিলেন না। এরপর তিনি আবার ফোনে কথা বলে আমাকে বললেন- আপনি চলে যেতে পারেন৷”
সাংবাদিকদের তাজ বলেন, ‘আমি যেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি তিনি যে ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি বা তারা অন্য স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন আমি হয়তো মহাখালী দিয়ে যাবো।
‘আমি মনে করছি এখানে একটি অঘটন ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। আমি আজ এই বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করতে এসেছি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সব নাগরিকের ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার আছে। আমি তাকে বলেছি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অতি দ্রুত উন্নতি করেন৷ তিনি এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।’
তাজ বলেন, ‘সাধারণ নাগরিক হলেও আমার একটি পরিচয় আছে। আমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সন্তান। সেই পরিচয়ের জায়গা থেকে অনেক মহল থেকে অনেক কিছু করার প্রয়াস থাকতে পারে।’
কারা ফলো করেছে বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছি। সেনাবাহিনী প্রধানের কাছেও জানাব। আমি গতকাল রাত ১০টা ৫১ মিনিট থেকে ৫৬ মিনিটের মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেছিলাম। সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে অনুরোধ করবো- আমি যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলাম ওই গেটে হাই রেজুলেশনের ক্যামেরা রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমাকে যে মোটরসাইকেল ফলো করেছিল তার লাইসেন্স বের করে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব।’
রাজনীতিতে ফিরবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার স্পষ্ট কথা- বার বার বলেছি যে আমার রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই পঁচা-নোংরা-নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফিরতে চাই না।
‘কোনো রাজনৈতিক দলের ওপরই প্রতিহিংসা বা নিপীড়ন করা ঠিক না। সেটা যে দলেরই হোক। এখানে অনেক নিরীহ নেতাকর্মী আছেন। তাদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়নের নিন্দা জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলোকে বলতে চাই, ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে হলে একটু আত্মসমালোচনা ও আত্মউপলব্ধি খুব প্রয়োজন।’
সোহেল তাজ এর আগে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনী প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে তাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অনুসরণ এবং পথরোধ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সোহেল তাজ বলেন, ‘২০১৯ সালে আমার এক ভাগ্নেকে অপহরণ করে আয়নাঘরে ১১ দিন রাখা হয়েছিল। আমি সে সময় গুম-খুনের প্রতিবাদ করেছিলাম। অনেক কায়দা-কষ্ট করে সে সময় আমার ভাগ্নেকে উদ্ধার করে এনেছিলাম। আমি বার বার বলেছি- এরকম ঘটনা ঠিক না। এমন ঘটনা বাংলাদেশে যেন আর না হয়।
‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক। আমার অবস্থান থেকে আমি সবসময় প্রতিবাদ করে এসেছি। হত্যা, গুম এবং মানুষের অধিকার বিলুপ্ত করা আমি কখনোই সমর্থন করিনি।’