জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান। দেশে সম্প্রীতি ও সমষ্টিগত অগ্রগতির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তিনি।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, প্রধান নির্বাহী, বার্তা সম্পাদক ও প্রধান সাংবাদিকদের উদ্দেশে জামায়াতের আমীর বলেন, ‘আমরা চাই ঘৃণার রাজনীতি কবর দেয়া হোক। এটা যেন আর না বাড়ে। আমরা চাই বিভাজনের রাজনীতিরও সমাপ্তি হোক।’
জামায়াতে ইসলামী কোনো ইস্যুতে জাতির বিভক্তিকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে আমরা চাই জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক।’
জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। তাদের কেউ কেউ চেয়েছিল, এ ধরনের কিছু ঘটলে জামায়াতে ইসলামী সর্বশক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করবে। তখন তাকে কেন্দ্র করে অন্য কিছু ঘটবে। আন্দোলনের গতি অন্যদিকে ঘুরবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হবে।’
তিনি বলেন, জামায়াত কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না এবং সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে। তবে যারা সুনির্দিষ্ট অপরাধ করেছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। অন্যথায় সমাজের কোনো সংশোধন হবে না। অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
ঢালাও অভিযোগের অনুশীলনেরও সমালোচনা করেন ডা. রহমান। বিশেষত একটি হত্যা মামলার উল্লেখ করেন যেখানে ৫০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গণ অভিযোগ প্রকৃত অপরাধীদের বিচার থেকে বাঁচতে সুযোগ করে দিতে পারে। এতো মামলার দরকার নেই। মানুষকে সংশোধন করার জন্য কিছু প্রতীকী ঘটনাই যথেষ্ট।’
কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকার উল্লেখ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের আহ্বান জানান জামায়াত আমীর। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সবাই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করুক। এটা আমাদের অবস্থান- শুধু ভারতের জন্য নয়, সবার জন্য।’
‘বন্ধু হিসেবে আমাদের সাহায্য করুন। কিন্তু জবরদস্তি করার চেষ্টা করবেন না। আমাদের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। আমরা সবার কাছে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চাই।’
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের জন্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলের পক্ষ থেকে এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আপনারা এটি রেকর্ডে রাখবেন।’
জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদসহ জামায়াতের জেষ্ঠ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।