বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্ষমতার হাতবদল, চাঁদাবাজি বহাল

  •    
  • ২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১৯:০৮

খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে চাঁদাবাজি চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ক্ষমতার পালাবদলে দখলদার বদলেছে। এসেছেন বিএনপিপন্থীরা। আর চাঁদাবাজি বহাল রয়েছে বরাবরের মতোই।

দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী খুলনার অভ্যন্তরে সোনাডাঙ্গায় রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। ‌এখান থেকে প্রতিদিন ১৮টি রুটে ৪৫০ থেকে ৫০০ বাস বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন ওই বাস স্ট্যান্ডে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ক্ষমতার পালাবদলে দখলদার বদল হয়েছে। এসেছেন বিএনপিপন্থীরা। তবে চাঁদাবাজি বহাল রয়েছে বরাবরের মতোই।

বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনে গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়। তৎকালীন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ওই কমিটির সভাপতি হন। এছাড়া খুলনা মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আনিসুর রহমান পপলু এই সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। তারা দায়িত্ব নিয়ে দৈনিক বাস প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা আদায়ের নির্দেশনা দেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তাদের কমিটির নিয়ন্ত্রণে ছিল ওই বাস স্ট্যান্ডটি।

নানামুখী বিতর্কে জড়িয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আগে আওয়ামী লীগে কোণঠাসা হয়ে পড়েন মিজানুর রহমান মিজান। ফলে ধীরে ধীরে শহরে তার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের নির্দেশে ওই কমিটির নেতাদের বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডের একক নিয়ন্ত্রণ নেন শেখ সোহেল। তার হয়ে স্ট্যান্ডটি পলিচালনা শুরু করেন খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন সোনা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডটি দখল করে নিয়েছেন বিএনপিপন্থীরা। বর্তমানে সেখানে খুলনা বিভাগীয় বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি নামে নতুন একটি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সমিতির সভাপতি হয়েছেন মোকাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন রবিউল করিম। তারা সরাসরি বিএনপি বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে না থাকলেও বিএনপি সমর্থিত হিসেবে পরিচিত।

আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, ‘তারা অস্ত্রশস্ত্র ও দলবল নিয়ে এসে আমাকে জোর করে সেখান থেকে বের করে দিয়েছে। একদম সন্ত্রাসী কায়দায় তারা বাসস্ট্যান্ড দখল করেছে।’

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রবিউল করিম বলেন, ১৫ বছর আগে প্রকৃত মালিকদের বের করে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে স্ট্যান্ড পরিচালনা করা হয়েছে। তারা বাসপ্রতি ৫০০ টাকার মতো চাঁদা আদায় করতো। তবে আমরা বাস প্রতি একশ’ বা দেড়শ’ টাকা করে নিচ্ছি। কারণ স্ট্যান্ড পরিচালনায় অনেক খরচ আছে।’

শনিবার দুপুরে ওই বাস স্ট্যান্ডটি পরিদর্শন করেছেন এই প্রতিবেদক। একাধিক বাস চালকরা জানিয়েছেন, সেখানে ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজি কোন কিছুই বন্ধ হয়নি।

খুলনা-সাতক্ষীরা রূটের বাসচালক ইব্রাহিম বলেন, ‘এবারে ভেবেছিলাম দেশটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাস্তবে তো কিছুই হল না। আগে একপক্ষ চাঁদা আদায় করতো, এখন আরেক পক্ষ আদায় করছে। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরা সব কিছুই জানে। তারাও এই চাঁদার টাকার ভাগ পান। তাহলে এসব অনিয়ম বন্ধ করবে কে?’

বাসচালকের সহকারী রশীদ বলেন, ‘একটি বাস দৈনিক যা লাভ করে তার এক-তৃতীয়াংশ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আরেক অংশ টাকা শ্রমিকের বেতন ও বাকি টাকা মালিকরা পান। এই চাঁদার বাড়তি টাকা ঠিকই যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়ার মাধ্যমে নেয়া হয়। সুবিধাবাদী শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে পারলে বাস ভাড়াও কমানো সম্ভব হতো।’

আরেক বাসচালক নিয়ামুল বলেন, ‘দেশে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকলেও বিএনপির নেতারা তলে তলে সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। ঠিক আওয়ামী লীগের মতো সাধারণ মানুষকে তারা নির্যাতন শুরু করেছেন। এই বাসস্ট্যান্ডও তার ব্যতিক্রম নয়।’

মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন দখলের চেষ্টা

শুধু মালিক সমিতি নয়, মোটর শ্রমিকদের একটি সংগঠন রয়েছে ওই স্ট্যান্ডে। গত ৫ থেকে ৭ আগস্ট দফায় দফায় সেটি নেয়ার চেষ্টা করে একটি পক্ষ। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা সেটি বন্ধ করতে পেরেছেন।

মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘এক পক্ষ এসে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের রুমে তালা মেরে দিয়েছিল। ছাত্ররা তা জানতে পেরে এখানে এসে তালা খুলে অফিস আমাদের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে গেছে। তবে এখনও শঙ্কা রয়েছ হামলা চালানোর।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতির কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ছাত্রদের তা বুঝাতে পেরেছি বলে তারা আমাদের সহায়তা করেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর