আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভয়াবহ এক আতঙ্কের নাম ছিলো ‘গুম’। রাজনৈতিক ব্যক্তি এমনকি সাধারণ মানুষের মুখে মুখে বলতে শোনা যেত- ‘কথা বলা যাবে না, গুম হয়ে যেতে হবে’। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী কিছু লিখলেও গুম হওয়ার ভয় তাড়া করে বেড়াতে মানুষকে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর বেরিয়ে আসতে থাকে ভয়াবহ নানা তথ্য। গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে ‘আয়নাঘর’ নামক ভয়ঙ্কর এক বন্দিশালার কথা। দিন গড়িয়ে মাস এমনকি বছরের পর বছর সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল শত শত মানুষকে। পরিবারের সদস্যরাও জানতেন না তাদের স্বজনের এমন দুর্বিষহ যন্ত্রণার কথা। জাতীয় প্রেসক্লাব কিংবা অন্যান্য জায়গায় দফায় দফায় মানববন্ধন হয়েছে ঠিকই। তবে মেলেনি স্বজনের সন্ধান।
লম্বা সময়ের শাসনে ঠিক কত মানুষ এভাবে গুম হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই কোনো সংস্থার কাছে। এবার সেই প্রশ্নের উত্তর বের করতে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
আওয়ামী লীগের পুরো শাসনকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে সরকার। মঙ্গলবার ‘কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ এর ক্ষমতাবলে এই কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কমিশনের সভাপতি করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
আওয়ামী লীগের টানা শাসনকালের শুরু ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করবে এই কমিশন।
‘কমিশন অফ ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে এই কমিশন।