বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুশতাক-কিশোরের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার রহস্য উন্মোচন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২২ আগস্ট, ২০২৪ ২৩:৩২

লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের গ্রেপ্তার বা নির্যাতনের সঙ্গে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। ‘বণিক বার্তা’ নামক একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যে একটি নির্জলা মিথ্যা কাহিনি তা একজন সাইবার যোদ্ধা ও বিগত সরকারের সময় নির্বাসিত বাংলাদেশি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে।

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুধু ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের হিসেবে কিছু গণমাধ্যম তাদের প্রতিপক্ষ কিংবা অপছন্দের কাউকে কাউকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও মানসিকভাবে হয়রানি করার হীন উদ্দেশ্যে অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে।

এরই অংশ হিসেবে দেশের একজন সফল ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে কোনো কোনো দুষ্টচক্র চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তার সফলতা, সুনাম ও সুখ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওই চক্রটি নানাভাবে অপতৎপরতা ও অপপ্রচার শুরু করেছে।

গতকাল ২২ আগস্ট ‘বণিক বার্তা’ নামক একটি সংবাদপত্র চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে নিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার আক্রোশের শিকার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরকে। দুজনের ওপরেই চালানো হয়েছিল ব্যাপক নির্যাতন। এর মধ্যে বন্দি অবস্থায় কারাগারেই মারা যান মুশতাক আহমেদ।

অথচ লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের গ্রেপ্তার বা নির্যাতনের সঙ্গে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই প্রতিবেদনটি যে একটি নির্জলা মিথ্যা কাহিনি তা একজন সাইবার যোদ্ধা ও বিগত সরকারের সময় নির্বাসিত বাংলাদেশি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে। তিনি তার স্ট্যাটাসে মুশতাক এবং কিশোরকে তার টিমের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, উল্লেখিত কার্টুনটির আইডিয়া এবং ডিজাইনও তার করা ছিল, কিশোর কার্টুনটি এঁকেছিলেন মাত্র।

জুলকারনাইন উল্লেখ করেছেন, ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে যখন ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রচারিত হয়, তখন আওয়ামী সরকার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ করে যে মুশতাক-কিশোর-মিনহাজ মান্নান-দিদার ভুঁইয়া-তাসনীম খলিল-শাহেদ আলম, এরা সবাই বুঝি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল! এতেই বোঝা যায় মুশতাক কিংবা কিশোরের প্রতি তৎকালীন সরকারের আক্রোশ ছিল। এর মধ্যে নাফিজ সরাফাতের যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কেননা তিনি সরকারের কেউ ছিলেন না। তার পরিচয় শুধুই একজন ব্যবসায়ী হিসেবে।

জুলকারনাইন আরও বলেছেন, ‘অত্যন্ত বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্রদের সহায়তায় ২০২২-এর শেষে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধানের সরাসরি নির্দেশে র‌্যাব মুশতাক-কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।’ এতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, মুশতাক-কিশোরের আটকের সঙ্গে চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিন্দুমাত্র যোগসূত্র নেই। এবং ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর অপচেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে গেছে।

এর ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে ‘ধর্মের ঢাক আপনি বাজে’। অর্থাৎ যতই চেষ্টা করা হোক না কেন অসত্য তথ্য প্রচার করে কখনোই মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।

এ ছাড়া প্রতিবেদক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত কিংবা তার অফিসের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করে, তার কোনো মন্তব্য না নিয়ে শুধু চাঞ্চল্য সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে অবমাননাকর এবং বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। কাজেই এটি বণিক বার্তার নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।

জুলকারনাইন সায়ের তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের ঘটনা এভাবে তুলে ধরেছেন-

চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখি করেছি আমি, সরাফাতের যে কার্টুনটি আলোচনায় সব সময় উঠে এসেছে, সেটার আইডিয়া এবং ডিজাইনও আমার, কিশোর ভাই কার্টুনটি এঁকেছিলেন মাত্র। একই সময়ে আমাদের পরিচালিত পেইজ 'I am Bangladeshi' হতে করোনাকালীন আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার বিষয়েও আমরা নিয়মিত কার্টুন এবং স্যাটায়ার প্রকাশ করতাম। চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের কার্টুনটি যেদিন আমরা প্রকাশ করি, তার ঠিক ২-৩ দিনের মধ্যেই মুশতাক-কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আমিসহ তাসনীম খলিল, শাহেদ আলম, মিনহাজ মান্নান, দিদার ভুঁইয়ার নামে ডিজিটাল সিকিউরিটির মামলা করা হয়। যখন এসব চলছিল, ঠিক সে সময় আমি ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’-এর গোপন প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করছিলাম। কেবলমাত্র মুশতাক ভাই এ বিষয়টা জানতেন।

তিনি আরও লিখেছেন, যখন তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হলো, তার পরপরই বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, র‌্যাবের একটি দল বাংলাদেশে অবস্থান করা মুশতাক ভাই, কিশোর ভাই, মিনহাজ মান্নান ইমন ভাই, দিদার ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ৩০ ঘণ্টা আগে। দেশের বাহিরে থাকায় তাসনীম খলিল, শাহেদ আলম ও আমাকে গ্রেপ্তার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, 'I am Bangladeshi' পেইজটি আমি, মুশতাক ভাই এবং সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বেশ কয়েকজন বন্ধু ২০০৯ সাল থেকেই পরিচালনা করছি। কার্টুন আঁকার জন্য কিশোর ভাইকে ২০১৮ সালের শেষে সংযুক্ত করা হয়। এই পেইজের সঙ্গে মিনহাজ মান্নান ইমন, তাসনীম খলিল, শাহেদ আলম, দিদার ভুঁইয়ার কখনোই কোনো সম্পর্ক ছিল না।

'যেদিন তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়, সেদিনই আমরা জানতে পারি, কি ভয়াবহ রকমের নির্যাতন চালানো হয়েছিল মুশতাক ও কিশোর ভাইয়ের ওপর। এই অত্যাচারের মাত্রা ভাষায় বর্ণনা করার মতো না। আমি জানতে পারি র‌্যাবের একটি দল তাদের আটক করে ডিজিএফআই সদর দপ্তরে নিয়ে যায়। সেখানে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে অমানবিকভাবে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে কিশোর ভাই চিনতে পেরেছিলেন বলেও তিনি দাবি করেছিলেন।’

‘আওয়ামী সরকারের ভয়ের রাজত্বের মধ্যেও কিশোর-মুশতাকের গ্রেপ্তার বেশ আলোচিত হয়, বিভিন্ন গোষ্ঠী বিক্ষোভ-মিছিল করে। পেইজ থেকে আমরাও প্রচার করি যে যেহেতু নাফিজের কার্টুন প্রকাশের পরপরই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, নিশ্চয়ই নাফিজই এর নির্দেশদাতা ছিলেন। মহামারি করোনা ও ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমি সব কিছু থেকেই একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।’

জুলকারনাইন লিখেছেন, ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে যখন ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রচারিত হয়, তখন আওয়ামী সরকার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহ করে যে মুশতাক-কিশোর-মিনহাজ মান্নান-দিদার ভুঁইয়া-তাসনীম খলিল-শাহেদ আলম, এরা সবাই বুঝি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল! কিন্তু বাস্তবে তাসনীম খলিল ব্যতীত আর কেউই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১ ফেব্রুয়ারি-পরবর্তী সময়ে মুশতাক ভাইয়ের জেলে মৃত্যুর ঘটনার পর আমি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করি খুঁজে বের করতে যে, কার নির্দেশে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং কেন অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়, কেন জামিন বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়। অত্যন্ত বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্রদের সহায়তায় ২০২২-এর শেষে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধানের সরাসরি নির্দেশে র‌্যাব মুশতাক-কিশোর-মিনহাজ মান্নান-দিদারকে গ্রেপ্তার করে। ডিজিএফআই থেকে প্রতিদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট স্ক্রিনশট আকারে প্রিন্ট করে পাঠানো হতো। করোনা সিরিজের ওই কার্টুনে মহামারি নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা-বিষয়ক কয়েকটি কার্টুন দেখে হাসিনা তৎকালীন ডিজিকে বলেন এসব যারা আঁকে তাদের বিষয়ে একটু খোঁজ-খবর নিতে।

আর তৎকালীন ডিজিএফআই প্রধান খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে মুশতাক-কিশোরের জীবনটাই ওলটপালট করে দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজ গ্রহণযোগ্যতা সুদৃঢ় করতে তিনি নিজেই ওই নির্যাতন প্রক্রিয়ায় টেলিফোনে যুক্ত হন এবং বিভিন্নভাবে টর্চারের পরামর্শ দেন। এবং আদালতকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ডিজিএফআইর অনুমোদন ব্যতীত যেন তাদের জামিন দেওয়া না হয় বলেও জুলকারনাইন উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, জুলকারনাইন সায়ের লন্ডনভিত্তিক অনুসন্ধানী ও জনস্বার্থ-বিষয়ক ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বাংলা আউটলুকের প্রধান সম্পাদক ও মানবাধিকারকর্মী। তিনি আল-জাজিরা কর্তৃক বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারিত বিখ্যাত অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ (ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক) নিয়ে কাজ করেন, যেখানে তিনি গোপন রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে বুদাপেস্টে হারিস আহমেদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধান চালান।

বাংলাদেশের দুর্নীতিবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কারের একটি বিভাগে তিনি ও তার তদন্ত টিম ২০২২ সালে ‘বেস্ট হিউম্যান রাইটস জার্নালিজম’ বিভাগে অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কার অর্জন করে।

এ বিভাগের আরো খবর