দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির উল্লেখ করে ভারতের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে।’
তিনি প্রতিবেশী দেশকে উভয় দেশের জনগণকে রক্ষায় ‘জনবিরোধী নীতি’ থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র: ইউএনবি
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘কোনো ধরনের পূর্ব সতর্ক-বার্তা ছাড়া এবং আমাদের প্রস্তুতির কোনো সুযোগ না দিয়েই বাঁধটি খুলে দেয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশে আকষ্মিক এই বন্যার কারণ জানতে চাইবেন।’
রিজওয়ানা বলেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের বন্যা এড়ানোর উপায় খুঁজতে অফিসিয়াল চ্যানেলে আলোচনা চলছে।’
নাহিদ বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে এবং অসহযোগিতার পরিচয় দিয়েছে।’
অন্যদিকে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। বন্যার কারণ ব্যাখ্যা করে দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে যা বলা হচ্ছে তা তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।’
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তের জেলাগুলোতে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা বাংলাদেশের উদ্বেগ প্রকাশের খবর পেয়েছি। এটি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়।’
প্রতিবেশী দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী নদ-নদীতে বন্যা একটি অভিন্ন সমস্যা, যা উভয় পক্ষের জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং এর সমাধানে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮ জেলায় বন্যায় ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফেনী ও কুমিল্লায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
নাহিদ বলেন, ‘ভারতের নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ এবং পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করছে।
‘বন্যা পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য সরকার সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানদের সঙ্গেও আলোচনা করছে।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে ভারত উল্লেখ করেছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর অববাহিকা এলাকায় গত কয়েক দিনে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশে এই বন্যা মূলত বাঁধের ভাটির দিকের এই বৃহৎ ক্যাচমেন্টের পানির কারণে ঘটেছে।’
ভারত জানায়, যেহেতু দুটি দেশের ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি-বিষয়ক সহযোগিতা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানিসম্পদ ও নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগসমূহের সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ডুম্বুর বাঁধ সীমান্ত থেকে বেশ দূরে। বাংলাদেশ থেকে ১২০ কিলোমিটার উজানে অবস্থিত। এটি কম উচ্চতার (প্রায় ৩০ মিটার) বাঁধ, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ত্রিপুরার এই গ্রিড থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।
প্রায় ১২০ কিলোমিটার নদীপ্রবাহ বরাবর অমরপুর, সোনামুড়া ও সোনামুড়া-২ এ তিনটি পানির স্তর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
গত ২১ আগস্ট থেকে ভারতের ত্রিপুরা ও পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ভারী প্রবাহের কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে। অমরপুর স্টেশন একটি দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের অংশ, যার অধীনে আমরা বাংলাদেশে তাৎক্ষণিক বন্যার তথ্য পাঠাচ্ছি।
‘বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রবণতার তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ৬টার দিকে বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল। এর ফলে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়।’
তারা আরও বলছে, ‘তবুও আমরা জরুরি ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহের জন্য অন্যান্য উপায়ে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।’