বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টানা বর্ষণে তলিয়েছে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল, পানিবন্দি লাখো মানুষ

  • প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম   
  • ২২ আগস্ট, ২০২৪ ১৬:২৮

ভারী বৃষ্টিপাত আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জারি করা হয়েছে পাহাড়ধসের সতর্কতাও। তবে ওই সতর্কতা জারি করেই যেন প্রশাসন দায়িত্ব শেষ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নগরের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলও বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যানবাহন কম থাকায় বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবীরা।

এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। জারি করা হয়েছে পাহাড়ধসের সতর্কতাও। তবে ওই সতর্কতা জারি করেই যেন প্রশাসন দায়িত্ব শেষ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নগরের পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পতেঙ্গার সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।

খবর নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দ্বিতীয় দফা ডুবেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। নগরের শুলকবহর, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, ওয়াসা রেবতী মোহন সড়ক, প্রবর্তক মোড় কাতালগঞ্জ, ডিসি রোড, ফুলতলা, কে বি আমান আলী রোড, চকবাজার, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, মোগলটুলী, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ রোড, হালিশহরের ওয়াপদাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পানি জমে গেছে। মঙ্গলবারও কোমর পানিতে ডুবে ছিল চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা।

নগরের মোহাম্মদপুর এলাকায় কোমর পানি জমে আছে। দোকান ও বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি যুক্ত হয়ে পানি আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চকবাজার চক সুপার মার্কেট এলাকায়ও একই অবস্থা।

খুলশী বিজিএমইএ রেলওয়ে কলোনি এলাকায়ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এখানকার বাসিন্দা রবিন আজাদ বলেন, ‘এর আগে কখনও আমাদের বাসায় পানি ওঠেনি। এবার বাসার ভেতরে হাঁটু পানি। শিশুদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।’

চকবাজারের ফুলতলা থেকে বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোড পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন পথচারীরা। একই অবস্থা কাতালগঞ্জ এলাকায়ও। কোমর পানিতে তলিয়ে আছে পুরো এলাকা।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কয়েক দশকের পুরনো জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র ৩৬টি খাল ঘিরে নেয়া প্রকল্প। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় আরও ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির পূর্ত কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

এদিকে জেলার কয়েকটি উপজেলাও পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফটিকছড়ি

বুধবার রাতেই উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধুরং ও হালদা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় অন্তত ছয়টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমির। বন্যার কারণে ফটিকছড়ি থেকে হেঁয়াকো রামগড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ডুবে আছে উপজেলার মাইজভান্ডার-রাউজান সড়কও।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজ্জামেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফটিকছড়ি দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী ও বেশকিছু খালের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। লাখো মানুষ পানিবন্দি।’

রাউজান

হালদার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় তলিয়ে গেছে রাউজানের পশ্চিম নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, সাম মাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা ও বৈইজ্জাখালি, বাগোয়ান, পশ্চিম গুজরা, গহিরা, নোয়াজিশপুর, চিকদাইর ও ডাবুয়া। এসব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

নোয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকার কয়েকশ’ একর চাষাবাদের জমি ৫ থেকে ৬ ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের কয়েকটি খুঁটি। এতে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রাম।’

মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষদের। এছাড়াও মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা।

স্থানীয় সূত্র বলছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা আমলীঘাট, করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘মিরসরাইয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর