বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই: তারেক

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২০ আগস্ট, ২০২৪ ১৮:৩৪

গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফল করতে হলে কেউ দখলদারত্বে লিপ্ত হবেন না। কেউ দুর্বলের ওপর আঘাত হানবেন না, আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না। তারুণ্যের কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন।’ 

ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য-উদ্দেশ্য নস্যাতে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করাই এই মুহূর্তের প্রধান অগ্রাধিকার।

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। সূত্র: বাসস

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত হামলার ছক তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। হাসিনা পতন আন্দোলনের পক্ষের শক্তি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে বিতাড়িত অপশক্তি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করতে হলে বিতাড়িত গণবিরোধী শক্তিকে আইনের মুখোমুখি করার পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।

‘জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে প্রতিটি নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা।’

তিনি বলেন, ‘গণহত্যাকারী হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তাই দেশে জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনপ্রত্যাশা পূরণে একটি নিরাপদ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এখনই সময়। লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও অধিকারহারা মানুষ একটি স্বাধীন, নিরাপদ ও মর্যাদাকর জীবনের প্রত্যাশায় উন্মুখ হয়ে আছেন।’

বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল। আন্দোলন করতে গিয়ে এ সময় অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন।

‘আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যাকারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার হাতবদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির কাঙ্ক্ষিত গুণগত পরিবর্তন সম্ভব নয়।

‘জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থাকে টেকসই করতে হলে জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফল করতে হলে কেউ দখলদারত্বে লিপ্ত হবেন না, এতে সহায়তা করবেন না। কেউ দুর্বলের ওপর আঘাত হানবেন না, আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।’

প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার বদলে কার্যকর রাষ্ট্র সংস্কার নিশ্চিত করতে তারুণ্যের কাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারও মানুষ শহীদ হয়েছেন। অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকের হাত কিংবা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। শত শত মানুষ চোখ হারিয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন।

‘অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ৫ আগস্ট গণতন্ত্রকামী মানুষ আরও একবার স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করলেও হাসিনা পতন আন্দোলনে যেসব পরিবার তাদের সন্তান-স্বজন হারিয়েছেন কিংবা আহতদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যেসব পরিবারে অবর্ণনীয় দুর্দশা নেমে এসেছে, সেসব বীর সন্তানের পরিবারে স্বাধীনতার স্বাদের ছোঁয়া লাগেনি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় সহায়তার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

‘হতাহতদের পরিবারের সদস্যদেরকে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে সংবর্ধনা দেয়া হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানালে কিছু সময়ের জন্য হলেও এ পরিবারগুলো হয়তো একটু মানসিক সান্ত্বনা পাবেন। এ ধরনের উদ্যোগ গণঅভ্যুত্থানের চেতনা আর‌ও শাণিত করবে বলেও আমার বিশ্বাস।

‘৫ আগস্টকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করার বিষয়টিও বিবেচনা করা দরকার।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘২০১৮ সালেও সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল। সে সময় আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রীয় প্রতারণার শিকার হয়েছিল। গণহত্যাকারী হাসিনা আন্দোলনকারীদের নির্মমভাবে দমন করেছিল। এমনকি জালিম হাসিনা সেই সময় আহতদেরকে চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেননি। সুতরাং, দেরিতে হলেও ২০১৮ সালের হতাহত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদেরকে বর্তমানে রাষ্ট্র কিভাবে সহায়তা করতে পারে সেটিও বিবেচনায় নেয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

‘আমি বিশ্বাস করি তারুণ্যের শক্তি, তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে কখনোই একটি রাষ্ট্র ও সরকার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।’

দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “গণহত্যাকারী হাসিনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী সেই হাসিনা পালিয়েছেন। জনগণের প্রত্যাশা- আপনারা আপনাদের যার যার সংবাদপত্রে নির্ভয়ে এই শব্দটি লিখবেন ‘হাসিনা পালিয়েছে’। এর পরিবর্তে কোনও গণমাধ্যম ভিন্ন শব্দ প্রয়োগের অপকৌশল নিলে সেটি আপনাদের বিবেকের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”

সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের পথ ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। সেই নির্বাচনে রায় পেতে জনগণের মন জয় করুন। জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণের সুখ-দুঃখে সঙ্গে থাকুন, তাদের সঙ্গে রাখুন। ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যাতে অনিরাপদ বোধ না করেন সেটি নিশ্চিত করুন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘গণহত্যাকারী হাসিনা পতনের আন্দোলনে দেশে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিশেষ অবদান রেখেছেন। দেশে যখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল তখন প্রবাসীদের মধ্যে একদল সাহসী মুখ প্রবাস থেকেই জনগণের সামনে হাসিনার দুঃশাসনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে গণআন্দোলনে শামিল থেকেছেন। হাসিনা পতনের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রবাসী বাংলাদেশিকে প্রবাসে জেলজুলুম সইতে হয়েছে, হচ্ছে।’

ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে সাধ্যমতো প্রবাসীদেরকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর