বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকার পতন ষড়যন্ত্র মামলার আসামির নামে ছাত্র হত্যার মামলা

  • প্রতিনিধি, সাভার   
  • ২০ আগস্ট, ২০২৪ ১৩:২০

একের পর মামলার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ইসরাফিল বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায় আমি জানতে পারি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হক মুন্সী আমার ব্যবসা দখলের চেষ্টা করছে। ইপিজেডের কারখানায় গিয়ে আমি সেখানে ব্যবসা করতে পারব না, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এসব কর্তৃপক্ষকে জানায়। মূলত বিভিন্ন পক্ষ আমার ব্যবসা দখলের জন্যই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করে আসছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মতো ঢাকার সাভারেও সরকার পতন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দেড় ডজন মামলা করা হয়েছে।

এসব মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি ও দলীয় অসংখ্য নেতা-কর্মীকের আসামি করা হয়েছে।

সাভারের আশুলিয়া থানায় তিন দিনের ব্যবধানে করা এমন দুটি মামলায় সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও এক ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়েছে একই ব্যক্তিকে।

থানায় করা ওই মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিসহ শতাধিক নেতা-কর্মী ছাড়াও আসামি মো. ইসরাফিল হোসেন নামে ওই ব্যক্তি।

ব্যবসায়ী ইসরাফিলের দাবি, আন্দোলনের সময় দেশের বাইরে অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। কয়েক দিন আগেও শত্রুতামূলকভাবে সরকার পতনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মামলার আসামি করা হয়েছে। মূলত ব্যবসায়িক ফয়দা লুটতেই কোনো পক্ষ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এভাবে মিথ্যা মামলা করেছে।

নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করা ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেনের (৩৯) বাড়ি আশুলিয়ার ভাদাইল মধ্যপাড়া এলাকায়। তিনি ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার একজন ঠিকাদার।

মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালীন গত ২৬ জুলাই আশুলিয়া থানায় সরকার পতন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা, মারপিট, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। ৪৭ নম্বর ওই মামলায় পাঁচ নম্বর আসামি করা হয় ব্যবসায়ী ইসরাফিলকে।

ওই মামলার বিএনপির ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু ও ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খানসহ বিএনপির আরও ৪৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির বাদী আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক সোহেল মোল্লা।

এর তিন দিন পর গত ২৯ জুলাই বিএনপির সাবেক এমপিসহ ৫৪ জন নেতা-কর্মীর নামে একই অভিযোগে আশুলিয়া থানায় বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করা হয়। এ মামলায় ব্যবসায়ী ইসরাফিলকে ছয় নম্বর আসামি করা হয়।

এ ঘটনার পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ১৭ আগস্ট ব্যবসায়ী ইসরাফিলের নামে আশুলিয়া থানায় আবারও একটি মামলা করা হয়।

ওই মামলায় আওয়ামী লীগের ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদকে প্রধান করে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।

ব্যবসায়ী ইসরাফিল হোসেন বলেন, ‘১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আমার বাবা একজন বৈধ ঠিকাদার হিসেবে ব্যবসা করতেন। এরপর আমি ছাত্রদল নেতা আইয়ুব খানের সাথে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছি, তবে আমার কোনো পদ-পদবি ছিল না। এরপর ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাকালে আমার ব্যবসা দখলের জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়।

‘আমাকে থানায় ডেকে নিয়ে আটকে রেখে মামলা দেয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলকভাবে অন্তত আটটি মামলা করা হয়। তখন হাজতবাসও করতে হয়েছিল আমাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এত নির্যাতন সহ্য করার পর সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের সময় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আরও দুটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় আমি আওয়ামী লীগ সরকার পতনে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাটি দায়ের হয় আশুলিয়া থানায়। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন বাবু ও যুবদল নেতা আইয়ুব খান একই মামলার অন্যতম আসামি। অথচ গত ২৪ জুলাই আমি ব্যাংককে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম।

‘দেশে তখন আন্দোলন হচ্ছে, এটুকু জানি আমি। পরে দেশে ফিরে শুনে ২৬ জুলাই আমার নামে একটি মামলা হয়েছে। এরপর ২৯ জুলাই আমি সিঙ্গাপুরে যাই। আগে থেকেই আমার ওই ভিসা করা ছিল। ওই দিনেই আমি জানতে পারি আবারও একই অভিযোগে আশুলিয়া থানায় আমার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তখন ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানালে, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।’

ওই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, ‘এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন আমি সিঙ্গাপুরেই অবস্থান করছিলাম। এরপর মালয়েশিয়া থেকে গত ৭ আগস্ট দেশে ফিরে জানতে পারি, এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।’

একের পর মামলার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ী ইসরাফিল বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায় আমি জানতে পারি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হক মুন্সী আমার ব্যবসা দখলের চেষ্টা করছে। ইপিজেডের কারখানায় গিয়ে আমি সেখানে ব্যবসা করতে পারব না, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এসব কর্তৃপক্ষকে জানায়। মূলত বিভিন্ন পক্ষ আমার ব্যবসা দখলের জন্যই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করে আসছে।’

জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলাটি রুজু করা হয়েছে। অভিযোগকারীর বয়ানে কোনো ত্রুটি থাকলে বিশদ তদন্তের পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর