শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ‘হিন্দু গণহত্যা’ চলছে এমন অভিযোগ তুলে বাড়ি পোড়ানো, সহিংসতা ও নারীদের সাহায্যের আকুতির ভিডিও অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের পর যে অস্থিরতা শুরু হয়, তাতে চার শতাধিক মানুষ মারা যায়। ৫ আগস্ট সরকারের পতন ঘটলে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সে সময় তার দল আওয়ামী লীগের সদস্যদের লক্ষ্য করে সহিংসতা শুরু হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উগ্র ডানপন্থীরা, বিশেষ করে ভারত থেকে, ‘ইসলামি চরমপন্থীরা হিন্দুদের ওপর হামলা করছে’ এমন শিরোনামে সহিংসতার বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ভিডিও ছড়িয়ে মিথ্যা প্রচার করেছে।
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয় যে চট্টগ্রামের একটি মন্দিরে ইসলামপন্থীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তবে বিবিসি খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে, নবগ্রহ মন্দিরটি অক্ষত রয়েছে। আগুন লাগানো হয়েছিল পাশের একটি আওয়ামী লীগ অফিসে। মন্দিরের কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন যে মন্দিরে হামলা হয়নি, যদিও পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল।
এছাড়াও একজন হিন্দু ক্রিকেটারের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা দাবি করা হয়, যা আসলে একজন মুসলিম আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যের বাড়ি। এছাড়াও একটি স্কুলে আগুন দেয়া হয়, যার পেছনে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে।
যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশকে আরও উসকে দেয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই ভারত থেকে পরিচালিত বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বাংলাদেশে ধর্মীয় কারণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে শেখ হাসিনার বিদায়ের পর কার্যকর আইন প্রয়োগের অভাবে তা আরও তীব্র হয়েছে।
বাংলাদেশে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান বিবিসিকে বলেন, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
হিন্দু নিপীড়নের দাবি করে কিছু পোস্ট বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্যে দাঙ্গার সময় উস্কানিমূলক পোস্ট করার জন্য সমালোচিত ব্রিটিশ উগ্র ডানপন্থী কর্মী স্টিফেন ইয়াক্সলি-লেনন যিনি টমি রবিনসন নামে বেশি পরিচিত। তার শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে, ইসলামপন্থীরা হামলা চালিয়েছে। কিন্তু পরে দেখা যায়, ধর্মীয় সহিংসতা নয়; এটি জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ ছিল। স্থানীয় শিক্ষার্থী এবং বাসিন্দারাও জানিয়েছেন যে হামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এতে হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই জড়িত ছিল।
এই জটিল পরিস্থিতিতে সহিংসতার ঘটনাগুলো নিয়েও ধারণা পরিষ্কার নয় এবং সেগুলো ধর্মীয় আক্রমণ হিসেবেও ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্যপরিষদ ও এএফপির প্রতিবেদনে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাহতের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যাদের রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এদিকে মন্দিরে হামলার মিথ্যা দাবির জবাবে মুসলিম বিক্ষোভকারীরা মন্দির রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। সংঘাত ও সহিংসতা প্রতিহত করতে তারা কাজ করছে।
স্থানীয় বিক্ষোভকারী মইনুল জানান, হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মন্দির রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।