ক্ষমতার পালাবদলে দখল-চাঁদাবাজির আতঙ্ক বিরাজ করছে রাজশাহীতে। দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িও। রাতের আঁধারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি।
শিক্ষার্থী ও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তবে শিক্ষার্থী ও বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের নাম ভাঙিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগীয় কমিশনার জানান, এসব ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে রাজশাহীতে দখলবাজিতে নেমেছে এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানীরা। রাজশাহীর মিয়া পাড়ায় অবস্থিত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক বাড়িও দখলের চেষ্টা চালায় এই গোষ্ঠী।
বাড়িটির আঙিনায় থাকা রাজশাহী হোমিওপ্যাথি কলেজের প্রিন্সিপাল আনিসুর রহমান দাবি করেন, ৬ আগস্ট রাতে একদল যুবক এসে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ভেঙে দিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে এই কলেজের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরাও আছেন।
রাজশাহীর হড়গ্রাম এলাকার মিজান নামের এক ভুক্তভোগী জানান, ৬ আগস্ট একদল লোক অস্ত্রসহ তার জমি দখল করতে আসে। এ সময় তাকে অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। পরে স্থানীয় জনতা তাদের আটকে রেখে অস্ত্র উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে।
নগরীর বাজে সিলিন্দা এলাকাতেও খসরু পারভেজ নামের এক ব্যক্তির জমি দখলের চেষ্টা করা হয়। তিনি জানান, ৬ আগস্ট একদল লোক বিএনপির কর্মী পরিচয়ে তার জমি দখলের চেষ্টা করে। এ সময় তারা ওই জমিতে থাকা গ্যারেজে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
৯ আগস্ট মেহেরচন্ডি এলাকার সাহিন আক্তারের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চলায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করা হয়। একই দিন রাতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর কোয়েল ও তার সমর্থকরা হামলা-ভাংচুর চালানোর পাশাপাশি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে শিক্ষার্থী এবং বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের নাম ভাঙিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্বার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই সহিংসতা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নয়। শিক্ষার্থীদের নাম ব্যবহার করে কোনো দখল, হামলা, ভাংচুর ও সহিংসতা করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী বিশৃঙ্খলা, চাঁদাবাজি ও ভূমিদখলের সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে বা তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
‘৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে যারা দখলদারত্ব করেছে তাদের চিহ্নিতকরণে কাজ করা হচ্ছে। এতে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা পেলে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দখলদারত্বের এসব ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনগণের জানমালের ওপর হামলা করলে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’