দলীয় কারণে গত দেড় দশকের বেশি সময়ে প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত আমলাদের শিগগিরই পদোন্নতি দেয়া হবে জানিয়ে ইউএনবি বলেছে, এ তালিকায় রয়েছেন বঞ্চিত উপসচিব ও যুগ্মসচিবরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, বিসিএসের বিভিন্ন ব্যাচের উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বঞ্চিত বিএনপি-জামায়াত ঘরানার কর্মকর্তাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ কমানোর জন্যই এ পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউএনবি উল্লেখ করে, রাজনৈতিক কারণে আওয়ামী লীগ শাসনামলের গত ১৬ বছরে প্রশাসনে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শত শত কর্মকর্তা। গোয়েন্দা তদন্ত প্রতিবেদনে নামের সঙ্গে ‘নেগেটিভ’ উল্লেখ থাকায় বঞ্চিত করা হয় তাদের। অনেককে বছরের পর বছর ওএসডি থাকতে হয় কিংবা ফেলে রাখা হয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। এমনকি অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়।
গত ১৩ আগস্ট রাতে বঞ্চিত ১১৭ সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। আগের যারা বঞ্চিত উপসচিব আছেন, তারা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পাবেন। একইভাবে অতিরিক্তি সচিব পদেও পদোন্নতি হবে অনেকের।
প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রশাসন ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত উপসচিবরা।
এতে বলা হয়, সচিবালয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী কার্য সম্পাদনের জন্য উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সিনিয়র সার্ভিস পুল গঠন করা হয়।
সরকারের উপসচিব, যুগ্ম-সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা ২০০২ অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ২৫টি ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে এ পুল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদিও প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৪ হাজার ৮৯৯ জন (৯ দশমিক ৬২ শতাংশ)। অন্য ২৫টি ক্যাডারের সদস্য সংখ্যা ৪৬ হাজার ২৩ জন (৯০ দশমিক ৩৮ শতাংশ)।
এতে আরও বলা হয়, পরবর্তী পদোন্নতি, অর্থাৎ যুগ্ম সচিব ও এর ওপরের পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পাওয়া নিজ নিজ ব্যাচের সম্মিলিত মেধাতালিকা, সরকারি চাকরি আইন, পদোন্নতি বিধিমালা, সুপ্রিম কোর্টের রায় কোনো কিছুই মানা হয় না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের সব কর্মকর্তার নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে পদোন্নতি নিশ্চিত থাকলেও অন্য ২৫টি ক্যাডারের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটা আরোপ করে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক জুনিয়র ব্যাচের সঙ্গে স্বেচ্ছামূলক নামমাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ পদোন্নতি দেয়া হয়।
এ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১৩ থেকে ২২ ব্যাচের অত্যন্ত মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য দুই শতাধিক কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠতা হারিয়ে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে তাদের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তার অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গোটা জনপ্রশাসন মেধাহীন ও দক্ষ জনবলশূন্য হয়ে পড়েছে, অপরদিকে জনপ্রশাসনে চেইন অফ কমান্ডও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে অতি দ্রুত ক্যাডার নির্বিশেষে বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়তে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া ২৫ ক্যাডারের বেআইনিভাবে পদোন্নতিবঞ্চিত ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের উপসচিবদের পিএসসির মেধাতালিকা অনুযায়ী স্ব স্ব ব্যাচের সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা নিশ্চিত করে যুগ্ম সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেয়ার জোর দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সামনে আসেন প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার বঞ্চিত কর্মকর্তারা। পরের দিন ৬ আগস্ট সচিবালয়ে বৈঠক করেন পদোন্নতিবঞ্চিত অন্তত ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সভায় জ্যেষ্ঠতাসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির দাবি জানান তারা। এরপর তারা প্রশাসনে কর্মরত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক তালিকা তৈরি করে পদোন্নতির জন্য সচিবের দপ্তরে জমা দেয়া হয়।
জনপ্রশাসনে জমা দেয়া তালিকা সূত্রে জানা যায়, ওই তালিকায় অন্তত ২৪৪ জনের নাম ছিল। এর মধ্যে বিসিএস ১১তম ব্যাচের চার, ১৩তম ব্যাচের আট, ১৫তম ব্যাচের ২১, ১৭তম ব্যাচের আট, ১৮তম ব্যাচের ২২, ২০তম ব্যাচের ২১, ২১তম ব্যাচের ১০, ২২তম ব্যাচের ৮১, ২৪তম ব্যাচের ১২, ২৫তম ব্যাচের ১২, ২৭তম ব্যাচের ১৩, ২৮তম ব্যাচের ১০ ও ২৯তম ব্যাচের ২২ জন রয়েছেন।
এ তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা সিনিয়র সহকারী সচিব এবং যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও দুদকের মামলা নেই। গত মঙ্গলবার রাতে প্রথম দফায় তাদের ১১৭ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।