‘ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও ঝামেলা করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘ঝামেলা-ষড়যন্ত্র না করে আত্মসমর্পণ করুন। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’
ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যাকারী এবং শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদল অবস্থান কর্মসূচি করে। একই সময়ে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের ১ নং গেটে অবস্থান করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু।
বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নয়াপল্টনে অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আবারও ঝামেলা করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি শুভ হবে না। সুতরাং এখনও সময় আছে আপনারা আর ঝামেলা কইরেন না। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’
এছাড়া বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমণ্ডি ও হাজারীবাগ থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম। কর্মসূচি শেষে শান্তির পদযাত্রা বের করেন নেতাকর্মীরা।
পদযাত্রাটি সাইন্সল্যাব থেকে শুরু হয়ে কলাবাগান,পান্থপথ মোড়, ধানমণ্ডি ৩২ ও ২৭ হয়ে শংকর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইতিহাস বড় নির্মম, আল্লাহর বিচার বড় নির্মম। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষণস্থায়ী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার (শেখ হাসিনার) মুখ দিয়ে প্রতিশোধের জিঘাংসা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
‘আল্লাহর কী হুকুম দেখেন, সেই তাকেই পালিয়ে যেতে হলো। আবারও সেই জায়গায়, যেখানে তার গোঁড়া পোতা আছে। আমি সেজন্য আওয়ামী লীগারদের বলছি, এখনও সময় আছে আপনারা আর ঝামেলা কইরেন না। কারণ ঝামেলা করলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’
তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট চেষ্টা করেছিলেন যে আপনারা ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেবেন। কারও তো আপত্তি ছিলো না। কিন্তু ছাত্ররা তা হতে দেননি। হতে দেননি কেন? এই মানুষটাকে কেউ দেখতে চায় না।
‘খুনি হাসিনার চেহারা কেউ আর দেখতে চায় না। এক হাসিনা থেকে সারা বাংলাদেশে যত আওয়ামী লীগার ছিলো তারা ক্ষুদে হাসিনা তৈরি হয়েছে। সারাদেশে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তারা।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সৃদৃঢ় করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুল বলেন, ‘আজকের সমাবেশের ব্যানারে লেখা আছে, এই যে গণহত্যা, হাসিনা যে খুনি ও তার দোসরদের আমরা বিচার চাই। বিচার আল্লাহ করছে, আরও করবে। আমরা বিচার চাই এই সরকার কাছে; যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যাদের ওপরে জনগণ আস্থা রেখেছে। একটু স্বস্তি ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দেবে, একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেবে- সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে। আমরা সেটাই চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও দিতে চাই। একটা কথা আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। এই গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই করছি। আমরা লড়াই করেছি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওরা নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করে। এখন নতুন একটা ধুয়া তুলেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। সেটা কি? সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) খুব সুন্দর করে বলেছেন যে বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, এখানে সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আমরা সবাই মিলে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। সেই সূত্রে যারা আজকে হিন্দু সম্প্রদায়কে আলাদা করে দেখতে চায়, আমরা তাদের সঙ্গে একমত নই। তারা সবাই এক, বাংলাদেশের নাগরিক।’
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই- যারা এখনও বাইরে আছেন, এদিক-ওদিক করছেন, তারা এসব ঝামেলা আর ষড়যন্ত্র না করে ভালোয় ভালোয় আত্মসমর্পণ করুন।
‘আমাদের নেতা-কর্মীদের কোর্টে যেভাবে নেয়া হয়েছিলো এবং তারেক রহমান সাহেবকে ওইভাবে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদের বিচার করতে হবে। এদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিরোধী আইনে।’
ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে আমরা সাহায্য করব। এটা ছাত্র-জনতার সরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন।