শেখ হাসিনা ভারতে দীর্ঘকাল অবস্থান করলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বার্থের সম্পর্ক। কাজেই আমরা স্বার্থ বজায় রাখব এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করব।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে সোমবার বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের বর্তমান পরিস্থিতি এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য অন্তর্ববর্তীকালীন সরকারের এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেগুলোর বিষয়ও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা।
ব্রিফিংয়ে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরা বিদ্যমান পরিস্থিতির পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের মাধ্যমেই বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করে বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, একজন কূটনীতিক ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েন হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি একটি হাইপোথিটিক্যাল প্রশ্ন। উনি যদি কোনো দেশে গিয়ে থাকেন তবে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? এর কোনো কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেক বড় বিষয়। এটি স্বার্থের সম্পর্ক। বন্ধুত্বও কিন্তু স্বার্থের জন্য এবং স্বার্থ বিঘ্নিত হলে বন্ধুত্ব থাকে না। দুপক্ষের স্বার্থ আছে। ভারতের স্বার্থ আছে এবং বাংলাদেশেরও স্বার্থ আছে। কাজেই আমরা স্বার্থ বজায় রাখব এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করব।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে বিদেশিরা প্রশ্ন করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ একটি প্রশ্নও করেননি।’
ব্রিফিংয়ে ৬০ জনের বেশি কূটনীতিক অংশগ্রহণ করেন এবং উপদেষ্টার কাছে নতুন সরকার সম্পর্কে জানতে চান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের একটি ব্রিফিং নোট সরবরাহ করা হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বিদেশিদের সামগ্রিক মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক এবং তারাও জানেন যে আজ, কাল, সাত দিন, এক মাসের মধ্যে এটির সমাধান করা সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হয়েছিল এই সরকারের বিষয়ে ব্রিফ করার জন্য জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছি। আমরা বলেছি যে অংশীদারত্ব চাই দ্বিপক্ষীয় ও বহপক্ষীয়ভাবে। এর মধ্যে জাতিসংঘও রয়েছে।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মানবাধিকার অনেকের উদ্বেগের জায়গা। আমি বলেছি, বৈষম্য না থাকাটাই মানবাধিকারের অন্যতম উপাদান। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, এমন বেশ কিছু প্রতিনিধি আছেন আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে। এর থেকে বোঝাই যায় মানবাধিকার নিয়ে আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস।’
নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। কারণ আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি যে এই সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’