শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে নতুন এক যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। সাধারণ মানুষ তার বিদায়ের দিনকে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বিজয় দিবস হিসেবে। তবে দ্বিতীয় বিজয়ের পরদিন মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।
এমন ঢাকাকে স্মরণকালে হয়ত কেউ দেখেননি। পুরো শহরের কোথাও এদিন চোখে পড়েনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কোন পুলিশ সদস্যকে। শুধু তাই নয়, ঢাকার চিরচেনা যানজট নিরসনে কোন ট্রাফিক পুলিশও এদিন দেখা যায়নি কোথাও।
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি বেতনভূক এসব পুলিশ সদস্য গেল কোথায়? ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জনবিরোধী আচরণে দেশের মানুষ এখন ক্ষুব্ধ পুলিশের ওপর। যার ফলে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর দিনে সারা দেশে প্রায় একশ থানায় ভাংচুর, অগ্নিকাণ্ড এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা হয়।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ-আন্দোলনে সৃষ্ট জঞ্জাল পরিষ্কার করার কাজে নেমে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
আবার কোথাও কোথাও পুলিশ গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যাও করেছে এদিন। তবে তার পরদিনই তাদের হদিস নেই কোথাও। থানা নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীকে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীতে ছিলো গণপরিবহন সংকট। আগের রাতে সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর থেকে জানানো হয়, খোলা থাকবে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও দোকানপাট। সে অনুযায়ী কর্মজীবী মানুষ সকালে অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েই বিপাকে পড়েন।
রাজধানীর মিরপুরের এক চাকরিজীবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অফিস খোলা। যেতে হবে মতিঝিল। মেট্রোরেল বন্ধ, রাস্তায় কোনো গাড়িও নেই। দু-একটা যা আছে তাতে অনেক যাত্রী।’
তবে রাজধানীবাসীকে এদিন সবচেয়ে অবাক করেছে কোথাও কোনো ট্রাফিক পুলিশ থাকা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিগনালে তাই সকালের দিকে ভেঙে পড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।
মিরপুর-১০, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বনানী, মহাখালীসহ বেশ কিছু জায়গায সকাল থেকে গাড়ি কম থাকলেও ব্যবস্থাপনার সংকটে যানজট তৈরি হয়। তবে গণমাধ্যমের খবরে বিষয়টি উঠে এলে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করতে দেখা যায়।
রাজধানীতে মঙ্গলবার যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম। ছবি: নিউজবাংলা
মহাখালীতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থী খুব সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপনার কাজটি করছেন। প্রধান সড়ক দিয়ে রিকশা চলাচল করে যাতে যানজট তৈরি না হয় এজন্য কলেরা হাসপাতালের ভেতর দিয়ে রিকশা যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো হট্টগোল না করে শিক্ষার্থীরা হাসিমুখে কাজটি করছেন। রাজধানীর অন্যান্য পয়েন্টেও একইভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।
মনির নামের একজন চাকরিজীবী বলেন, ‘আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা যা করছে ইতিহাস তা কখনও ভুলবে না। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন ওই সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কিছুই করতে পারেনি। তবে সেটি আমাদের শিক্ষার্থীরা করে দেখিয়েছে।
‘আজকে দেখুন কী দারুণভাবে ওরা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। ভিডিওতে দেখলাম সংসদ ভবন ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছে ওরাই। ওদের নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত।’
শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নয়, শিক্ষার্থীরা নেমে পড়েছেন সংসদ ভবনসহ অন্যান্য জায়গা পরিষ্কার করার কাজেও।
মিরপুরে রাকিব নামে এক শিক্ষার্থীর অভিব্যক্তি, ‘মনে হচ্ছে দেশটা আমরা নতুন করে স্বাধীন করেছি। নতুন দেশে পুলিশ নেই তাতে কি। আমরা তো আছি। আমরাই ধুয়ে-মুছে এই দেশটাকে পরিষ্কার করব। আমরাই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করব। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক জায়গায় সাধারণ মানুষকেও দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করতে। তবে শহরজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী না থাকার সুযোগে যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকে নজর রাখার কথা বলছেন সাধারণ মানুষ।