বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুলিশহীন সিলেট নগরী, অগ্নিদগ্ধ স্থাপনা থেকে উঠছে ধোঁয়া

  • প্রতিবেদক, সিলেট   
  • ৬ আগস্ট, ২০২৪ ১৭:২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কয়েকদিনের সহিংসতা এবং পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সোমবারের হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ফলে মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছু দোকানপাট খুললেও সামনের কলাপসিবল গেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

যুগপৎ আতঙ্ক আর উল্লাসের একটি দিন পেরিয়ে মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিকরূপে ফিরতে শুরু করেছে সিলেট নগরী। সড়কে বেড়েছে যান চলাচল। তবে নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশ। এমনকি থানা- ফাঁড়িতেও নেই পুলিশ। বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা আর আগুনে এসব স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে কারফিউ তুলে নেয়া হয়। খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেড়েছে সড়কে যান চলাচল। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে কয়েকদিনের সহিংসতা এবং পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সোমবারের হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ফলে মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছু দোকানপাট খুললেও সামনের কলাপসিবল গেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার নগরেরর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার ও তালতলা ঘুরে দেখা গেছে- এসব এলাকায় অধিকাংশ মার্কেট ও বিপণি বিতান বন্ধ রয়েছে।

সড়কগুলোতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট-বড় প্রায় সব ধরণের গাড়ি চলাচল করছে। সড়কে আছে প্রাইভেট যানবাহনও। তবে মানুষের আনাগোনা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম।

ভাংচুরের শিকার সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাহা। ছবি: নিউজবাংলা

এদিকে নগর জুড়ে এখনও রয়ে গেছে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। আগুনে পোড়ার গন্ধ ভাসছে বাতাসে।

দুপুরে সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার এখানে অগ্নিসংযোগের পর তখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া উঠছে। পুরে ছাই হয়ে গেছে পুরো কার্যালয়।

কার্যালয়ে কোনো পুলিশ বা কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখা যায়নি। সব ফাইল ও কাগজপত্র পুড়ে ছাই। আঙ্গিনায় থাকা কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। অফিসটির সামনে রাস্তায় ছিল শত শত উৎসুক মানুষের ভিড়। সড়কে দাঁড়িয়ে ছিল দুটি সেনাবাহিনীর গাড়ি।

দুপুর ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে ধোঁয়ায় পানি দিতে শুরু করে।

আগুনে পোড়া স্থাপনা থেকে ধোঁয়া উড়ছে সিলেট কেতোয়ালি থানা থেকেও। এখানেও কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি।

এর আগে সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিলেটে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ছাত্র-জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। বিকেলে সিলেটের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অফিস, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি অফিস, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি দপ্তরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত সিলেটে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে বিক্ষোভকারীদের হামলা-ভাঙচুর থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে- হিন্দু-মুসলিম সবাই ভাই ভাই। কেউ যেন কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর না করেন।

একই অনুরোধ জানিয়ে জেলা ও মাহনগর বিএনপির পক্ষ থেকেও মাইকিং করেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন হামলা ও ভাঙচুর চালান। এছাড়া কোতোয়ালি থানা, বন্দরবাজার, লামাবাজার ও সোবহানিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, জালালাবাদ থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।

জানা যায়, টিলাগড় এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনের হাফিজ কমপ্লেক্সেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

নগরীর পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, গোপালটিলা এলাকায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (সদ্য সাবেক) রণজিত চন্দ্র সরকার এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

এছাড়া নগরীর আম্বরখানা এলাকায় মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, নগরীর শেখঘাটে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের বাসায়ও হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বাসায়ও হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।

এছাড়া নগরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাহাতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। বিকেল ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়। রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লুটপাটকারীরা চলে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নগরীর চৌহাট্টায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের মালিকানাধীন ইউনিক ফার্মেসিতেও লুটপাট হয়েছে। সিটি কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, রেজওয়ান আহমদ, লায়েক আহমদসহ অনেকের বাসায় হামলা হয়েছে। নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ আওয়ামী লীগ নেতা ও সিলেট জেলার অতিরিক্তি পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলামের বাসায় দুদফা হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ তার বাসায় ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করেন।

এছাড়া নগরীতে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও লুটপাট চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নানের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিভাগের আরো খবর