সিলেটে গান-মিছিলের মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
‘সরকারি বাহিনীর নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে’ বুধবার বিকেলে এই গান-মিছিল বের হয়।
বিকেল ৪টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে গান-মিছিলটি শুরু হয়ে নগরীর জিন্দাবাবাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই মিছিলের আয়োজক ছিল সিলেটের নাট্যসংগঠন নগরনাট, নাগরিক সংগঠন দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন।
বিকেল ৪টায় গান-মিছিলের আয়োজক নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউলের কণ্ঠে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়’ গান দিয়ে শুরু হয় গান-মিছিল। এতে অংশগ্রহণ করেন সিলেটের নাট্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যার প্রতিবাদে বুধবার সিলেটে মিছিল করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা
দেশে চলমান হত্যা ও অবিচারের প্রতিবাদে এই গান-মিছিলে গান পরিবেশন করেন নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সদস্য আঁখি, স্বর্ণা, তন্বী, শাওন, রাজন, দেবর্ষি, রাজ, রাজেশ্বরী, তিন্নিসহ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয় গান-মিছিল। গানের মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানও দেন সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
গান-মিছিল শেষে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশে কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।
তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র বিক্ষোভ দমনের নামে দেশে স্মরণকালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। এটা আমাদের মানবিক চেতনাকে ক্ষুব্ধ করেছে।
‘সরকারের ব্যর্থতা, উস্কানি ও নৃশংসতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র প্রত্যক্ষ করে সারাদেশের মানুষের মতো আমরা স্তম্ভিত, ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ। মানুষ হিসেবে বিবেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই তাড়না থেকে এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করতে পথে নেমেছি।’
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২১১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের ৪৫ শতাংশই শিক্ষার্থী। বয়সের হিসাবে শতকরা ৭৫ ভাগ অল্প বয়সী। এই যে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় গণহত্যা। এই গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা চাই। এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি হত্যার আলাদা আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হবে এটা আমাদের মুখ্য দাবী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে দেশে সংবিধানবিরোধী যে কার্যকলাপ হচ্ছে যেমন নিরাপত্তার নামে ডিবি অফিসে তুলে নেয়া- আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। যে দেশের হাইকোর্ট সরকারের এসব কর্মকাণ্ডকে মশকরা বলছে সেখানে রাষ্ট্র অনবরত এসব কাজ অব্যাহত রাখছে। তাই আমরা মনে করি সরকার একের পর এক সংবিধান লঙ্ঘন করছে। এর জন্য তাদেরও বিচার হওয়া দরকার।’
নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউল বলেন, ‘যেকোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে এ দেশে হত্যাকাণ্ড হয়। কারণ দেশে বিচার নেই। চলমান এই ছাত্রদের আন্দোলনে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ সব ধরনের মানুষকে হত্যা হয়েছে।
‘আমরা মনে করি এই নির্বিচার হত্যার দায় সরকারি বাহিনীর। আমরা যেহেতু সংস্কৃতিকর্মী, তাই আমরা গানে গানে সরকারের এই হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়েছি রাজপথে।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলারা রহমান, রাজনৈতিক সংগঠক অ্যাডভোকেট আনসার খান, উজ্জ্বল রায় ও রেজাউল কিবরিয়া।
আরও উপস্থিত ছিলেন- সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি মনির হেলাল, আইনজীবী অরূপ শ্যাম বাপ্পি ও জাকিয়া জালাল, নাট্যকর্মী উজ্জ্বল চক্রবর্তী, নাহিদ পারভেজ, বাপ্পী ত্রিবেদী, রাজিব রাসেল, দেবুজ্যোতি দেবু , মলয় চক্রবর্তী, রিপন চৌধুরী, নয়ন নিমু, নির্বাণ জনি, স্থপতি প্রসেনজিৎ রুদ্র, আয়কর উপদেষ্টা মুখলেছুর রহমান, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রাফু, সাবেক ছাত্রনেতা খালেদ মুরশিদ মুন্না, কিবরিয়া চৌধুরী সুমন ও শহীদুজ্জামান পাপলু, রোমেনা বেগম রোজী, শিশু-কিশোর সংগঠন ঊষার পরিচালক নিঘাত সাদিয়া।