কোটা সংস্কার আন্দোলনে এত প্রাণ যাওয়ার কথা ভাবতে পারেননি বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণহানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কখনও ভাবিনি আন্দোলনের নামে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবে। আমি কোনোদিন ভাবতেই পারিনি এই সময়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’
তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের ইস্যুতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল করে সরকার। সব দাবি তো মানাই হলো। তারপরও এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে যা যা ঘটেছে, এত প্রাণ যাবে৷ এটা ভাবতেও পারিনি আমি।
‘আমার দিক থেকে কোটা ইস্যুতে কোনো ঘাটতি রাখিনি আমি। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। স্থাপনা হয়তো পুনর্নির্মাণ করা যাবে, ফিরে পাওয়া যাবে, কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল, তারা তো আর ফিরবে না।’
দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৫০ জন নিহত হন, তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রাণহানির সংখ্যা দুই শতাধিক।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি জানি না অপরাধটা কী আমাদের। যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন।
‘সেখানে এতগুলো তাজাপ্রাণ ঝরে গেল। সেগুলো তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে আমি বেঁচে আছি। আমি জানি আপনজন হারালে কী কষ্ট হয়। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমি তো সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি।’
আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের সাথে দেখে। সেই বাংলাদেশে আবার রক্ত ঝরবে, কেন এই রক্ত ঝরা?’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষমতা তো ভোগের বস্তু না। আমি তো আরাম-আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি দিন-রাত পরিশ্রম করেছি বাংলাদেশকে উন্নত করতে। আর সেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি।
‘আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদা কেন নষ্ট করা হলো, সেটার বিচারের ভার আমি দেশবাসীর কাছে দিচ্ছি।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণহানি ও সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতাও চান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছি, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা আছে। বিশেষ করে বিদেশি। তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে ঘটনা যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা (হয়)।’
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা জুড়িশিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারও দাবির অপেক্ষায় আমি থাকিনি। আগেই জুডিশিয়াল কমিটি করে দিয়ে আজকে আবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি আমরা একজন জজ সাহেবকে দিয়ে করেছি। সেটা আমি বলেছি আরও দুইজন জজ সাহেবকে দিয়ে। আরও দুইজন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ানো।’