কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতেই সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার একটা ইস্যু তৈরি করে, সেই ইস্যুকে ডাইভারশনের দিকে নিয়ে যায়। এখন এটি তাদের আরেকটি প্রজেক্ট।
‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ তারা এতোদিন নেয়নি কেন? এখন কেন নিচ্ছে? এগুলোর পেছনে তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা ওরা বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না।
‘আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার- আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে। আমাদের আদর্শ হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। আমরা বিশ্বাস করি যারা এখানে রাজনীতি করে তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত কয়েকদিনের ঘটনায় ছাত্র ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন। তাদের বাড়িতে তাদের আত্মীয়-স্বজন কেউ খেতে পারছেন না। তাদের চোখের সামনে ছেলে চলে গেছে, তাদের ভবিষ্যৎ চলে গেছে। তাদের সবচেয়ে প্রিয় যে জিনিস সেটা চলে গেছে।
‘চার বছরের বাচ্চা, ছয় বছরের বাচ্চাটা হারিয়ে গেছে। এখানে রাষ্ট্রের জবাবটা কী? কেন তার প্রাণ গেল? কী উত্তর দেবে সরকার? দায়িত্ব তো তার। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব তার।
‘একথা বললে তো চলবে না যে আমরা কী করতে পারি, বিভিন্নভাবে ঘটে গেছে। এই হত্যার দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। যে কথাটা আমরা বলেছি- দায় স্বীকার করে তাদের চলে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমাধান। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই শেষ করতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।’
ফখরুল বলেন, ‘এই যে ঘটনাবলী, মানুষের প্রাণ গেছে- এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। অবশ্যই এটা গণহত্যা। আমি মনে করি, এই গণহত্যার তদন্ত অবশ্যই জাতিসংঘের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তে আমরা বিশ্বাস করি না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি তো বার বার বলেছি যে শিক্ষার্থীদের সব আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে।
‘তাদের প্রতি আমাদের একটা আহ্বান- এই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর জনগণের আন্দোলন হলো এই সরকারের চলে যাওয়া। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারকে চলে যেতে হবে। একই সঙ্গে এই মুহূর্তে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিও জানাচ্ছি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিয়ে একটা বক্তব্য দেয়া হয়েছিল। আপনারা দেখেছেন, খাবার খাওয়ার একটা নাটক করা হয়েছে। ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে একটা নাটক তৈরি করা হয়েছে। ডিবি অফিসের একটা নামই হয়ে গেছে ভাতের হোটেল হিসেবে।
‘এগুলো কখন কোন সময়ে হয়? ডিবি সরকারের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব কি শুধু যারা আন্দোলন করছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা এবং এসব নাটক তৈরি করা? নিশ্চয়ই না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি তো এখানে (সরকার) আওয়ামী লীগ খুঁজে পাই না। আমি আগেও বার বার বলেছি- এটা মূলত এখন পুরোপুরিভাবে একটা অদৃশ্য শক্তি। যে শক্তি এদেশকে পরিচালনার চেষ্টা করছে এটি সেই শক্তির একটি সরকার। এসব বাহিনীর প্রধানরা যে ভাষায় প্রকাশ্যে কথা বলেন তাতে মনে হয় না যে দেশে কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব আছে।
‘সুতরাং আমরা মনে করি যে, এদেশে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো সরকার নেই। অদৃশ্য শক্তি দেশে একটা অরাজনৈতিক সরকার পরিচালনা করছে।’