নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ৮২৬ কয়েদির পলায়ন এবং লুট হওয়া ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৪৫টি অস্ত্র, হাতকড়া ও এক হাজার ৯১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮৪ জনকে। আর আত্মসমর্পণ করেছেন ৪৮১ জন কয়েদি।
শুক্রবার নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
হিজবুত তাহরীর সংগঠনের নেতা জুয়েল ভূঁইয়াকে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বরুয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কাজিরচর গ্রামের আবুল ভূঁইয়ার ছেলে।
তার আগে কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৯ জঙ্গির মধ্যে দুই নারীকে ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, একজনকে নারায়ণঞ্জের সোনারগাঁ থেকে র্যাব এবং অপরজনকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা কারাগারে অগ্নিসংযোগ করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা ডিসি অফিস, এসপি অফিস, আদালত পাড়াসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে।
‘তারা কারাগার থেকে লুট করা অস্ত্র ও গুলি দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। নরসিংদী জেলা পুলিশের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে তাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে সরকারি সম্পদ ও জানমাল রক্ষা করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের হামলায় পুলিশের চার সদস্য গুরুতরসহ ৩৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক পুলিশের মাথায় ৭৫টি সেলাই লেগেছে। একজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।’
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার পরপরই লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে চিরুনি অভিযানে নামে পুলিশ। মাত্র পাঁচদিনের ব্যাবধানে লুট হওয়া ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৪৫টি উদ্ধার করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ২০টি চায়না রাইফেল, ১৫টি রাইফেল ও ১০টি শটগান।
এছাড়া এক হাজার ৯১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি কারাগারে হামলার ঘটনায় পৃথক ১১টি মামলায় ১৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর এখন পর্যন্ত আইনজীবী সমিতি এবং জেলা পুলিশের সহায়তায় পালিয়ে যাওয়া ৪৮১ জন কয়েদি আত্মসমর্পণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯ জুলাই বিকেলে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। ওই সময় তারা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে জেল সুপার ও জেলারের অফিস কক্ষ, পুলিশ ব্যারাকসহ পুরো কারাগারে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র, গুলি ও খাবার লুট করে। ওইসময় জেলে থাকা জঙ্গি সংগঠনের নয় সদস্যসহ ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়ে যায়।
বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসযজ্ঞ চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। ওই সময় কারাগারের ভেতরের বিভিন্ন প্রান্তে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এতে কারাগারের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে যায়।
ওইদিন কারাগার থেকে লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র ও সাড়ে আট হাজার গুলি। এর মধ্যে ৪৫টি অস্ত্র ও এক হাজার ৯১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে লুট হওয়া অস্ত্রের সন্ধানদাতাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।