ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা বিক্ষোভ, অবস্থান এবং সমাবেশ শেষে রাত ৯টায় হলে ফিরেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আর বাইরের যেসব শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন তারাও ফিরে গেছেন। আর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি আন্দোলনের সমন্বয়করা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আগামীকাল পবিত্র আশুরা। সেটি আমাদের বিবেচনায় আছে। আমরা রাতে বসব। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) আমাদের নারী শিক্ষার্থীসহ অনেকের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা এই হামলা চালিয়েছে বহিরাগত টোকাই এনে। আর সেই হামলার পর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিরিয়ানি পার্টি করে। এটি আমাদের পীড়িত করে এবং লজ্জা অনুভব করি। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এরপর শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে যার যার আবাসে ফিরে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে রাতে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: নিউজবাংলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক দফা দাবি এবং সোমবার সারাদেশে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। পরে চানখাঁরপুলে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পাঁচ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চানখাঁরপুলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে থাকা ছাত্রদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর, ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল হয়ে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে দিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ফের শহীদ মিনারের অবস্থানে জড়ো হন।
এ সময় মিছিলটি টিএসসির দিকে এগুতে চাইলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ মাইকে ঘোষণা দেন, '’আমরা সবাই এখন শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আমাদের কর্মসূচি শেষ করব।’
তখন শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। তারা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমরা এখন এখানে কর্মসূচি শেষ করে দিলে হলের ছেলেরা হলে ফিরবে কীভাবে?’
শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে যাওয়ার দাবি তোলেন।
এরপর হাসনাত আবদুল্লাহ সবাইকে শান্ত হয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়ার অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা সবাই জড়ো হোন। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেই।’
একটু পর আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে টিএসসি হয়ে নিজ নিজ হলে ফিরে যাব।’
কিছুক্ষণ পর আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মাহিন বলেন, ‘আমাদের মিছিল টিএসসির দিকে যাবে৷’
এরপর আবার হাসনাত আবদুল্লাহ বলে ওঠেন, ‘টিএসসিতে বিজিবি, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ আছে।’
পরে শিক্ষার্থীরা বলে ওঠেন, ‘ভয় পেলে আজকে আমরা নামলাম কেন? কালকে কোনো কর্মসূচি দিলে সেটিতে হামলা করবে না তার বিশ্বাস কী? তাই আজকেই কিছু একটা করতে হবে।’
এদিকে একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। আর পেছনে রয়েছে ছাত্রলীগ।
এরপর হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ঠিক আছে, আমরা ফুলার রোড হয়ে ভিসি চত্বরে যাব।’
এরপর চানখাঁরপুলসহ চারপাশের সড়কে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফিরে আসেন।
পরে তারা ফুলার রোড, স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য হয়ে রাত ৮টার দিকে ভিসি চত্বরে আসেন। সমন্বয়করা শিক্ষার্থীদের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বরের দিকে চলে আসেন।
আর সেখানে মানব ব্যারিকেড তৈরি করে দাঁড়িয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। এসময় আন্দোলনকারীরা তাদের সামনে বসে পড়েন এবং ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘গো ব্যাক পুলিশ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
প্রায় আধ ঘন্টা অবস্থানের পর রাত পৌনে ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করে ফিরে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা দুপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাজ করছি। আমাদের কাজই হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা দেয়া।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় যখন যে সহযোগিতা চাইছেন, চেয়েছেন বা চাইবেন তা দিতে আমরা প্রস্তুত।’
তিনি বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে এখানে আছি। এই পুরোটা সময়ে এখানে ফৌজদারি অপরাধ হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
চানখাঁরপুলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিলো ক্যাম্পাসের মধ্যে। আর এটি হয়েছে ক্যাম্পাসের বাইরে। ডিএমপির মিডিয়া সেল এ সম্পর্কে ভালো তথ্য দিতে পারবে।’