দলমত নির্বিশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সবসময় সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৪-২৫’ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা এটা সব সময় মনে রাখতে হবে। নিজের জীবনের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে, পরিবার-পরিজন, বাবা-মাসহ সবকিছু ফেলে রেখে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।’
‘তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে। তাদের সব সময় সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের হয়তো আমার দলের প্রতি সমর্থন নেই, হয়তো অন্য দলে চলে গেছেন বা অন্য কোনো কারণ।
‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমার মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। আমার দলের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু তারপরও তারা মুক্তিযোদ্ধা।’
তিনি বলেন, ‘তারা যেখানেই যাক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে তারা এই দেশকে মুক্ত ও বিজয়ী করতে তাদের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। তাদের অনেকে পঙ্গু হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় এনে দিয়েছেন। তাই এক্ষেত্রে আমি মনে করি, তাদের সম্মানই হতে হবে সর্বোচ্চ।’
‘আমি সবাইকে সম্মান করি। এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের এই সম্মান দিক- এটাই চাই আমরা।’
একসময় মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ছিলেন বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। আজ তারা গর্ব করে বলতে পারেন- আমি মুক্তিযোদ্ধা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। এটা মাথায় রেখেই আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাউকে অবহেলা করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সংখ্যালঘু আছে, প্রতিবন্ধী মানুষ আছে। সরকার তাদের সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা যেন সমাজের সব সুযোগ-সুবিধা পায়, তারা যেন পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর রাখছি।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের ফেলোদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে দেশের দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক কিছু দেয়ার আছে। ভবিষ্যতে আপনাদেরই দেশকে আরও উন্নত করতে হবে।’
জনগণের টাকায় ফেলোশিপ নিয়ে তারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন এই বিষয়টি তাদের মনে রাখতে বলেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, আপনাদের উচ্চশিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা জনগণের। জনগণের সেবায় আপনাদের বিশেষ নজর দিতে হবে।’
এ বছর ১১ জন পিএইচডি এবং ৩৯ জন মাস্টার্স ফেলোশিপ পেয়েছেন।
বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে এ পর্যন্ত ৩০৮ জন মাস্টার্স ফেলো ও ১১৬ জন পিএইচডি ফেলোকে প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২১৫ জন মাস্টার্স ফেলো এবং ২৬ জন পিএইচডি ফেলো ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
তিনটি ক্যাটাগরিতে এই ফেলোশিপ দেয়া হচ্ছে- সরকারি কর্মকর্তা (বিসিএস), সরকারি কর্মকর্তা (নন-বিসিএস) ও অন্যান্য (বেসরকারি পরীক্ষার্থী)।
সব সেক্টরের সম্পদের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৮ সালে এই ফেলোশিপ চালু করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটকে (জিআইইউ) এটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছেন এই ফেলোরা।
ফেলোশিপ বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
ফেলোশিপ পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে কয়েকজন পিএইচডি ও মাস্টার্স ফেলো তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ ও এর জনগণের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তারা।
অনুষ্ঠানে ফেলোশিপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।