কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রোববারের বক্তব্যকে অপমানজনক আখ্যা দিয়ে তার প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে পুরো জাতিকে কলঙ্কিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
চীনে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন। দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন যে, রাজাকারের নাতি-পুতিরা সবকিছু পাবে। মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোটা আর মেধা তো এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, নাতিপুতি মেধাবী না আর যত রাজাকারের বাচ্চা, নাতিপুতি উনারা মেধাবী, তাই না?’
প্রধানমন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্যকে নিজেদের জন্য অপমানজনক দাবি করে এ বক্তব্য প্রত্যাহারে রোববার রাতে বিক্ষোভে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ওই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, প্রত্যাহার করতে হবে’ ধরনের স্লোগান দেন।
সেলিম মাহমুদ বলেন, “মধ্যরাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে নিজেদের ‘রাজাকার, রাজাকার’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, মুক্তিকামী মানুষ তখন সমস্ত আবেগ দিয়ে স্লোগান দিয়েছিল, ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর সেই পবিত্র বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে আজ ছাত্র-ছাত্রীরা ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ এই স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করেছে।
“স্বাধীন বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি দেখব, সেটি কোনো দিন কল্পনাও করতে পারিনি। ভিডিও ক্লিপ কয়েকবার দেখার পরও এখনও আমি সেটি বিশ্বাস করতে পারছি না। এ রকম ঘৃণ্যতম, দেশবিরোধী ঘটনা দেখব, সেটি কোনো দিন দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে পরিচয় দিতে এসব ছেলে-মেয়েদের একবারও লজ্জা হলো না? কলঙ্কিত হওয়ার ভয়ে একবারও তাদের বুক কাঁপল না? এ কোন বাংলাদেশ দেখছি আমরা?”
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রু রাজাকাররা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ সে মার্চ গণহত্যা করেছে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, ছাত্র-শিক্ষক কর্মচারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে, ছাত্রী হলে ঢুকে ছাত্রীদের ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার বলে স্লোগান দেয়?
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং প্রাক্তন অধ্যাপক হিসেবে আজ আমি এটি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না। কোনোভাবেই এটি মেনে নিতে পারছি না। নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই ঘটনায় আমার মতো লক্ষ-কোটি মানুষের আজ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’