বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মধ্যরাতে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছি, আমাদের সবার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম অপমানজনক কথা বলছেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে মাঠে নেমেছেন। এখন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে ‘আমি রাজাকার, আমি রাজাকার’ স্লোগান দিয়েছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কোন স্লোগান দেননি। তারা বারবার বলেছেন, ‘আমরা রাজাকার নই, আমরা রাজাকার নই।’”

কোটা সংস্কারের আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি বক্তব্যকে অপমানজনক দাবি করে এর প্রতিবাদে রোববার মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যারা নিজেদের মেধাবী দাবি করে এ প্রথার সংস্কার চায়, তাদের সবাইকে রাজাকারের সন্তান বা নাতিপুতি বলেছেন।

চীনে সাম্প্রতিক সফর নিয়ে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন। দেশবাসীর কাছেও প্রশ্ন যে, রাজাকারের নাতি-পুতিরা সবকিছু পাবে। মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোটা আর মেধা তো এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের সন্তান, নাতিপুতি মেধাবী না আর যত রাজাকারের বাচ্চা, নাতিপুতি উনারা মেধাবী, তাই না?’

প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে বের হতে থাকেন। শুরুতে বের হয়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা। এরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীম উদ্‌দীন হলের শিক্ষার্থীরা।

পরে বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেই খবরের ভিত্তিতে হলটির গেটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হলে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় মারামারি হয়।

পরে আন্দোলনকারীরা হলের ফটক খুলে ভেতরে ঢুকে স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে আনেন। এভাবে তারা মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ভেতরেও ঢুকে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনেন।

যে সময় শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ শুরু হয় তখন রাত প্রায় ১১টা। নারী শিক্ষার্থীদের হলগুলো রাত ১০টা থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরও হলগুলোর নারী শিক্ষার্থীরা হলের গেট খোলে রাস্তায় নেমে আসেন এবং মিছিলে যোগ দেন।

ওই সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, প্রত্যাহার করতে হবে’ ধরনের স্লোগান দেন।

আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কে দুই দফায় মিছিল করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন। আর নারী শিক্ষার্থীরা মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে নারী শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে বাকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন।

এরপর সেখানে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সারজিস আলমসহ কয়েকজন।

তারা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এটি তাদের ব্যানারের কোনো প্রোগ্রাম না। শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ বিক্ষোভ করছেন।

ওই সময় আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি শুনব। এরপর তাদের কথা শুনে আমাদের নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়ার থাকলে দেব।’

রাত একটায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের হলে ফিরতে শুরু করেন। পরে অনলাইনে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমরা যারা কোটা সংস্কারের আন্দোলন করছি, আমাদের সবার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম অপমানজনক কথা বলছেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে মাঠে নেমেছেন। এখন গুজব ছড়ানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভে ‘আমি রাজাকার, আমি রাজাকার’ স্লোগান দিয়েছেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কোন স্লোগান দেননি। তারা বারবার বলেছেন, ‘আমরা রাজাকার নই, আমরা রাজাকার নই।’”

আজ সোমবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) দুপুর ১২টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে তার এই অপমানজনক বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তা না হলে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের আগামীকাল ১২টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করার আহ্বান জানাচ্ছি। আর কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ মিছিল করব।

‘আমরা চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) ঢাকাস্থ সকল কলেজসমূহের শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে যোগ দেবেন।’

সড়কে বুয়েট শিক্ষার্থীরাও

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে অপমানজনক দাবি করে সড়কে নামেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরাও। রোববার রাত সোয়া একটার দিকে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে মিছিল বের করেন। তারা মিছিল নিয়ে পলাশী, টিএসসি, বকশীবাজার হয়ে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জমায়েত হন।

ওই সময় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আমাদের এই শহীদ মিনারে জড়ো হব। এর আগে আপনারা সবাই আমাদের কর্মসূচির ব্যাপারে অবহিত হয়ে যাবেন।’

ছাত্রলীগের বিক্ষোভ

এদিকে রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের আধা ঘন্টা পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে থাকা অবস্থায় মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করেননি। তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে রাত আড়াইটার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ শুরু হয়।

মিছিলটি শাহবাগ, টিএসসি, নীলক্ষেত হয়ে ফের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। ওই সময় তারা ‘হই হই, রই রই, জামাত শিবির গেলি কই’, ‘আমার মাটি আমার মা, পাকিস্তান হবে না’, ‘আছিস তো রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ধরনের স্লোগান দেন।

এরপর ছাত্রলীগ রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

ওই সময় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই। আর বিনয় দেখানোরও সময় নেই। আগামীকাল (সোমবার) থেকে বাংলাদেশের রাজপথে কোনো রাজাকার থাকবে না।

‘ছাত্রলীগের সকল স্তরের সকল ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে, আগামীকাল থেকে বাংলাদেশে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, যারা আমাদের লাখো শহীদের রক্তের সাথে তামাশা করবে, রাজপথেই তাদের সাথে আমরা ফয়সালা করব।’

কর্মসূচি ঘোষণা করে সাদ্দাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং লাখো শহীদের রক্তকে অপমান করায় আগামীকাল (সোমবার) বিকেল তিনটায় ছাত্রলীগ রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী অবস্থান গ্রহণ করবে। এ কর্মসূচিতে ঢাকার সকল ইউনিটকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

‘একই সাথে বাংলাদেশের সকল জেলা, মহানগরে বিকেল তিনটায় একযোগে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর