পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষাসহ বিগত ১২ বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ১৭ জনের মধ্যে ১০ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালত মামলার শুনানি শেষে মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।
এদিন এই মামলায় গ্রেপ্তার ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের মধ্যে পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনসহ সাত আসামি স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হন।
স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া অপর ছয় আসামি হলেন- অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (পেসপাচ) সাজেদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং লিটন সরকার (বেকার)।
আদালত জবানবন্দি নেয়ার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। এছাড়া অপর ১০ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়।
পরে ১০ আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
আসামিদের পক্ষে ফারুক আহাম্মদ, কাওসার আহমেদসহ কয়েকজন আইনজীবী জামিন চেয়ে শুনানি করেন। সাত আসামি ঢাকার পৃথক চার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুল হাসান।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচারকের খাস কামরায় আনা হয়। সিআইডির কালো রঙের একটি গাড়িতে করে তাদের আদালতের ফটকের সামনে পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। পরে সিআইডির একটি দল তাদের দ্রুত বিচারকের খাস কামরার দিকে নিয়ে যায়।
এর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সোমবার দিনভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আবেদ আলীসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ওইদিন রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আইনে সিআইডির উপ-পরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, শরীফুল ইসলাম ভুইয়া, দীপক বনিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, একে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথকে পলাতক দেখানো হয়েছে।