ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে প্রতিমায় আগুন দেয়ার অভিযোগে দুই নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপন ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) অজিত কুমার বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনবি।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।
সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারের সই করা ৭ জুলাইয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অজিত কুমার বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে গত ১৮ এপ্রিল দুজন নির্মাণশ্রমিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এ ঘটনার পর তাদের দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয় বলে মনে করে সরকার। এ অবস্থায় তারা স্থানীয় সরকার আইনে অপরাধ করায় একই আইনে তাদের স্বীয় পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।’
প্রজ্ঞাপনে একই আইনে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আসন শূন্য ঘোষণা-সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল আহসান তালুকদার ইউএনবিকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা এসেছে, বিধি অনুযায়ী আমরা সেটি বাস্তবায়ন করব দ্রুততম সময়ের মধ্যে।’
গত ১৮ এপ্রিল ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরের প্রতিমার শাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় স্থানীয়রা মন্দির-সংলগ্ন পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণকাজের শ্রমিকরা জড়িত বলে সন্দেহ করেন। পরে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে চার নির্মাণশ্রমিককে মারধর করা হয়। রাতেই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধরের তিনটি ভিডিও পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে শ্রমিকদের মারধরে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামানকে অংশ নিতে দেখা যায়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য আত্মগোপন করেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন জানান, মধুখালীর পঞ্চপল্লীর ঘটনায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আলাদা তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে আটজনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় চারজন ও হত্যা মামলায় সাতজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ধরতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।