বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মৃত্যু পরোয়ানা’ নিয়ে দাঁড়িয়ে সহস্রাধিক গাছ

গাছ কাটার অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রাথমিক একটি সমীক্ষা তৈরি করে জমা দিয়েছে জেলা পরিষদ। অনুমোদন পেলে গাছ কাটার দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সড়ক প্রশস্তকরণের অংশ হিসেবে মেহেরপুর-মুজিবনগর ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে কাটার জন্য লাল চিহ্ন দেয়া হয়েছে সহস্রাধিক গাছে।

যেকোনো সময় বিলীনের ঝুঁকিতে থাকা ১৪ শতাধিক গাছ যেন দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে।

বন বিভাগ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং জেলা পরিষদের একাধিক সূত্রের ভাষ্য, গাছগুলোর প্রকৃত মালিক মেহেরপুর জেলা পরিষদ।

বন বিভাগের সহায়তায় মেহেরপুর-মুজিবনগর ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশে গাছগুলো লাগিয়েছিল জেলা পরিষদ। সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য গাছ কাটতে ইতোপূর্বে জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছিল সওজ।

গাছ কাটার অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে প্রাথমিক একটি সমীক্ষা তৈরি করে জমা দিয়েছে জেলা পরিষদ। অনুমোদন পেলে গাছ কাটার দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এমন বাস্তবতায় সওজ মেহেরপুর বলছে, মুজিবনগর সড়কে গাছ কাটার জন্য দেড় বছর আগে চিঠি দেয়া হয়েছিল। সেখানে সড়কের উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন নতুন করে গাছ কাটলে সড়কে আবার খানাখন্দের সৃষ্টিসহ নানা জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হবে। এ ছাড়াও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শুধু মেহেরপুর থেকে আমঝুপি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা চার লেনে উন্নীত করা হবে, কিন্তু গাছ কাটার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে মেহেরপুর থেকে দরবেশপুর পর্যন্ত সীমান্তজুড়ে, যেটা সম্পূর্ণভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত।

অন্যদিকে বন বিভাগ বলছে, তাদের দায়িত্ব শুধু গাছ গণনা ও মূল্য নির্ধারণ। রাস্তা সড়ক বিভাগের আর গাছের মালিকানা জেলা পরিষদের।

সড়ক দুটিতে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশে বট, পাকুড়, কড়ই, রেইনট্রি, মেহগনি, শিশু, কাঁঠাল, আম, জামসহ নানা প্রজাতির গাছ। শতবর্ষীসহ বিভিন্ন গাছে লাল রং দিয়ে করা হয়েছে নাম্বারিং। লাল রং অর্থই হচ্ছে গাছের মৃত্যু পরোয়ানা।

কিছু গাছ সড়কের একটু ওপরে, তবে বেশির ভাগ গাছই রয়েছে সড়কের বাইরে। অথচ প্রায় সব গাছেই নাম্বারিং করা হয়েছে।

ক্ষোভ

সড়কের পাশের এসব গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেহেরপুরের সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, ফের হাজারের বেশি পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর।

মেহেরপুর পৌর এলাকায় বসবাসকারী ও জেলা কাজি সমিতির সভাপতি একেএম খাইরুল বাশার বলেন, ‘গত বছর মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের তিন সহস্রাধিক শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা হয়েছে সড়ক দুই লেন থেকে চার লেনে প্রশস্তকরণের জন্য। দেখা গেছে গত বছর যে সকল গাছ কাটা হয়েছে, ওইসব এলাকা এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

‘তার ওপরে এ বছর তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষ ও প্রাণিকূলের জীবন ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বড় বড় গাছ কেটে উজাড় করার কারণে চলতি বছরে তাপপ্রবাহ বেশি অনুভূত হয়েছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ বলেন, ‘গাছ, পাহাড় ও নদী হলো জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের প্রাণ। সেই গাছ নিধন করলে বিপাকে পড়ে পরিবেশ, যার প্রভাব পড়ে প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষ ও প্রাণিকূলের উপরেও। গাছ হচ্ছে পাখিদের আবাসস্থল। এর নিচে পথচারী ও পশুপাখি বিশ্রাম নেয়। নিচে পথচারী ও শ্রমিকরা কাজের মাঝে বিশ্রাম নেয়।

‘বিভিন্ন পশু-পাখির খাদ্যের উৎসও হচ্ছে গাছ। এ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে অক্সিজেন উৎপাদনের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। জীব ও পরিবেশ বৈচিত্র্য রক্ষার্থে অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বৃক্ষ নিধনের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা জরুরি।’

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য

মেহেরপুর জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস টি হামিম হায়দার বলেন, ‘বন বিভাগ শুধু গাছ গণনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। গাছগুলো জেলা পরিষদের। সড়ক সওজের।

‘তারা গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিলে শুধু গাছের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব পড়ে বন বিভাগের ওপর।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আইনজীবী আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি একজন পরিবেশবাদী ও বৃক্ষপ্রেমী ব্যক্তি। গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয়াটা আমার জন্য কষ্টকর।

‘সওজ সড়ক সম্প্রসারণের প্রকল্প নেয়াতে গাছ কেটে তাদের সহযোগিতা করতে হবে, তবে গাছে নাম্বারিং করা হলেও মোট কতগুলো গাছ কাটা হবে, সেটা এখনই চূড়ান্ত নয়।’

সওজ মেহেরপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেহেরপুর- চুয়াডাঙ্গা সড়ক প্রশস্ত ও চার লেন করার প্রক্রিয়া চলছে। এতে জেলা পরিষদের লাগানো কিছু গাছ কাটা পড়বে, তবে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে গাছ রেখেই সড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমাপ্ত করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে আর কোনো গাছ কাটার প্রয়োজন নেই। এতে বরং সড়কের ক্ষতি হবে।

‘এ সড়কের গাছ না কাটার জন্য শিগগিরই সওজের পক্ষ থেকে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেব।’

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক শামীম হাসান বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষায় গাছ যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তেমনভাবেই রাষ্ট্র ও এলাকার উন্নয়নে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব জরুরি। সড়ক নির্মাণ করার পরও সড়ক ও জনপথের আরও জায়গা থাকবে। সেখানে পুনরায় নতুন করে কীভাবে গাছ রোপণ করা যায়, সে বিষয়ে বন বিভাগকে উদ্যোগী হতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর