বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্যা: সিরাজগঞ্জে গোখাদ্যের সংকট তীব্র

  •    
  • ৮ জুলাই, ২০২৪ ১১:৩১

শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি জলিল শেখ জানান, বন্যার কারণে তারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘাসের জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় কোনো মতে খড় খাইয়ে পশুগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া বন্যার কারণে খৈল, ভুসিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দাম বাড়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে।

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বাড়ায় চরাঞ্চল ও নিচু এলাকার মানুষের পাশাপাশি তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে গোখাদ্য নিয়ে।

বন্যায় চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে জেলার প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু।

পানিবন্দি এসব গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে এখনও খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্গতরা।সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন, কাজিপুরের খাসরাজবাড়ি, শাহজাদপুরের পাচিল এলাকায় রোববার দেখা যায়, পানি বৃদ্ধির কারণে বানভাসি মানুষ উঁচু স্থানে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। গবাদি পশুগুলোকে পলিথিনের ছাউনিতে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ গবাদিপশু নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন।

স্বাভাবিক সময়ে চরের জমিতেই জোটে গরুর খাবার। বন্যায় চরের পুরো এলাকা জলমগ্ন হওয়ায় কোথাও নেই গবাদিপশুর চারণভূমি। অভাবের সংসারে কষ্ট করে পালন করা এসব পশু চুরি কিংবা হারানোর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৫১ মিটার। আগের ১২ ঘণ্টায় হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি না বাড়লেও বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অপরদিকে কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৩৬ মিটার। আগের ১২ ঘণ্টায় তিন সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

কী বলছেন খামারিরা

শাহজাদপুর উপজেলার রেশমবাড়ি গ্রামের খামারি জলিল শেখ জানান, বন্যার কারণে তারা গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ঘাসের জমিগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় কোনো মতে খড় খাইয়ে পশুগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া বন্যার কারণে খৈল, ভুসিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দাম বাড়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে।

একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী গাভীগুলোকে খাবার দিতে না পারায় দিন দিন দুধের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। এ ব্যাপারে তারা মানুষের পাশাপাশি গরুর খাবার বিতরণের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। শুধু ভুসির ওপর খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কাজীপুরের শহীদ এম মনসুর আলী ইকোপার্কে আশ্রয় নেয়া গবাদিপশুর মালিকরা জানান, এক সপ্তাহ পার হলেও তারা কোনো গোখাদ্য সহায়তা পাননি। উচ্চ মূল্যে খড় কিনে এক থেকে দুই বেলা খাবার দিচ্ছেন। চারদিক পানিতে নিমজ্জিত থাকায় প্রাকৃতিক কোনো খাবার জোগাড় করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

তারা আরও জানান, নিজেরা দুই বেলা খেতে না পারলেও গরুর খাবার জোগাড় করতে প্রতিদিন দূরের কোনো এলাকা থেকে কিছু ঘাস বা খড় জোগাড় করে নিয়ে আসতে হচ্ছে। অনেক সময় গরুগুলোকে বন্যার পানিতে সাঁতরিয়ে অন্য কোথাও উঁচু জমিতে নিয়ে যেতে হচ্ছে।

কর্মকর্তাদের ভাষ্য

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওমর ফারুক বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু এরই মধ্যে পানিবন্দি। এ সময় গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। এ জন্য আমরা পাঁচটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি।

‘তারা নিয়মিত বানভাসি কৃষক ও খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আর গবাদিপশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য আমাদের বিভাগে কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পর্যাক্রমে বিতরণ করা হবে।’

বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পাউবো সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। গত ১২ ঘণ্টায় শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকলেও কাজিপুর পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার কমেছে।

‘আশা করছি দ্রুতই পানি কমে যাবে। এ মৌসুমে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের উপপরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, ‘এরই মধ্যে বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জেলার চার হাজার ৬৩০ হেক্টর ফসলি জমি। এসব জমির পাট, তিল, কলা ও মরিচ প্লাবিত হয়েছে। এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।’

সিরাজগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার ৩৬২টি পরিবারের ২৩ হাজার ৮৩৬ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৩৬ জন।

‘তাদের মাঝে এরই মধ্যে ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে ৪৪০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর