উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
জেলায় যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, ইছামতি, করতোয়াসহ চলন বিল অঞ্চলের নদ-নদীর পানিও বাড়ছে।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার এক হাজার ২৭৬ পরিবারের সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়েছেন।
গত ১২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ড পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও কাজিপুরের মেঘাইঘাট পয়েন্টে চার সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একই সঙ্গে চরাঞ্চলের ৪০০ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়ে তীব্র ভাঙন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার শনিবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হু হু করে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চরাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে এসব অঞ্চলের শত শত পরিবার। তলিয়ে যায় আবাদি জমি, রাস্তাঘাট ও বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যাকবলিত মানুষগুলো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেন।
এদিকে সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, শাহজাদপুরের হাটপাচিল ও কাজিপুরের খাসরাজবাড়িতে চলছে নদীভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ এলাকায় অনেক বাড়িঘর যমুনায় বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, বন্যার পানি উঠে জেলার ৪০৮ হেক্টর জমির পাট, তিল, কলা ও মরিচক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সর্বশেষ জেলার পাঁচটি উপজেলার ১ হাজার ২৭৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। ৫০০ মেট্রিক টন চাল আর ১০ লাখ টাকা মজুত আছে। সময়মতো সেগুলো বিতরণ করা হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, কয়েক দিন ধরেই যমুনার পানি দ্রুতগতিতে বেড়েছে। এরই মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আগামী দুই-তিন দিন ধীরগতিতে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। জেলার ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, পানি বাড়লেও এ মৌসুমে মাঝারি ধরনের বন্যার শঙ্কা রয়েছে।