চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল এবং ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
ইবির বটতলায় শনিবার বেলা ১১টার দিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন কয়েক শত শিক্ষার্থী। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। ওই সময় তারা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ইবির ফটক সংলগ্ন মহাসড়কে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় জরুরি রোগীর সেবা দেয়া যানবাহগুলোকে ছেড়ে দেয়া হলেও বন্ধ রাখা হয় অন্য যানবাহন। প্রায় ৪৫ মিনিটের অবস্থান শেষে আজকের কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।
আন্দোলনে অংশ নেয়া আইন বিভাগের ছাত্রী শাওয়ানা শামীম বলেন, ‘আমি একজন নারী হয়ে চাকরিতে নারী কোটার বিরুদ্ধে কথা বলছি। চাকরিতে কোনো প্রয়োজন নেই নারী কোটার। নিজের যোগ্যতায় স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।
‘চাকরিও নিজের যোগ্যতায় পাব। আমি যেখানে অগ্রসর, কোটা সেখানে কী প্রয়োজন? এটা সংবিধানবিরোধী।’
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী আইরিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা নারী হয়েও আমরা নারী হয়েও নারী কোটা চাচ্ছি না। তাহলে সেই ৫৩ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা কেন কোটার সুবিধা ভোগ করবে?
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করছি না। তাদের অবদান দেশের মানুষ আজীবন মনে রাখবে, কিন্তু সরকারি চাকরিতে এই ৩০ শতাংশ কোটা বৈষম্য সৃষ্টি করে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’
কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ছাত্র ইউনিয়ন ইবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুইট বলেন, ‘আমাদের এই বৈষম্যবিরোধী সংগ্রাম এক দিনের নয়। এই সংগ্রাম ১৯৫২ সাল থেকেই চলমান রয়েছে। আমার মনে হয় না মুক্তিযোদ্ধারা এই কোটা বৈষম্য টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তারা দেশে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
‘আমরা কোটা বাতিলের পক্ষে না; আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে। বাংলাদেশে ছাত্রসমাজ গুণীজন, বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদদের সাথে সমন্বয় করে একটি সুষ্ঠু সমাধান বের করবেন, এই প্রত্যাশায় আমাদের এই লড়াই সংগ্রাম।’
এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের দুইজন শিক্ষক কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।