বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ২ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

  • প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম   
  • ৫ জুলাই, ২০২৪ ১৮:৪৫

কুড়িগ্রামে এরই মধ্যে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রামে। এতে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, পানিবন্দি সোয়া লাখ মানুষ। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০।

কুড়িগ্রামে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে শুক্রবার।

জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা।

কুড়িগ্রামে এরই মধ্যে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রামে। এতে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০।

বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

অনেক পরিবারে গত পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে যায় তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দেয় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।

বানভাসিদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

জেলায় গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসিদের। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

প্লাবিত যেসব অঞ্চল

জেলার ৯টি উপজেলাই বন্যা কবলিত। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় ছয়টি উপজেলা আক্রান্ত বেশি। ভারতের আসাম-মেঘালায় রাজ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়।

ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর,নাগেশ্বরী এবং রৌমারী উপজেলা দিয়ে।

ভারতের পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কুড়িগ্রামের ছয়টি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশপথে যেসব ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া, কালিগঞ্জ, বল্লভের খাস ও কেদার।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ, যাত্রাপুর ও পাঁচগাছি প্লাবিত হয়েছে । উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, হাতিয়া প্লাবিত হয়।

চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ, অষ্টমিরচর, নয়ারচর, চিলমারী সদর ও রমনা এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা, রৌমারী সদর, বন্দবের, চরশৌলমারী ও যাদুরচর প্লাবিত হয়। এ ছাড়া রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ, রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের মানুষ বেশি আক্রন্ত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার আবদুল মতিন বলেন, ‘পানি হু হু করে বাড়ছে। ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। চিন্তাভাবনা করছি উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার।’

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অনেক চর ও দ্বীপ চর তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্টে বসবাস করছে চরের মানুষ।

‘এ ছাড়াও কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের দুটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৮২ টন চাল ও ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৩৯৫ টন চাল, আট লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। এগুলো পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সরকারের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার সকাল থেকে উলিপুর ও সদর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন।

তিনি জানান, জেলার ৯ উপজেলার সবগুলো বন্যা কবলিত। বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন এক হাজার ২৪৬ জন।

ডিসি আরও জানান, শুক্রবার ৯ উপজেলায় দুই হাজার ৮৫০টি পরিবারের মধ্যে ২৮ টন চাল বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া শুকনা খাবার, তেল, ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও বিতরণ করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর