বিদেশে পাঠানোর কথা বলে নওগাঁয় কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৭০ জনের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সাজেদুর রহমান নামে এক দালাল। বিদেশে গিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় টাকা দিয়েও দিনের পর দিন ঘুরে বিদেশ যেতে না পেরে গ্রামের এসব সাধারণ মানুষ এখন সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জগদাশ, গুরবাড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৭০ জন জমিজমা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল বিক্রি ও ঋণ করে জগদাশ গ্রামের সাজেদুর রহমান নামে এক দালালকে টাকা দেন। কয়েক মাসের মধ্যে তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর কথা থাকলেও দুই বছরের বেশি সময়েও তাদের কেউ দেশ ছাড়ার সুযোগ পাননি।
সম্প্রতি ফ্লাইটের ভুয়া টিকিট দেখিয়ে একেক জনের কাছ থেকে ৫ লাখেরও বেশি টাকা নেন দালাল সাজেদুর। এরপর বিদেশে পাড়ি জমানোর আশায় বাড়ি থেকে ঢাকায় গেলে তারা জানতে পারে টিকিট ও ভিসা ভুয়া। এরপর থেকেই লাপাত্তা ওই দালাল। এদিকে বিদেশ যেতে না পেরে ঋণের চাপে ভুক্তভোগীদের অনেকেই এখন বাড়িছাড়া।
জগদাশ গ্রামের ভুক্তভোগী তালেব হোসেন বলেন, ‘বিদেশ যাওয়র জন্য দালাল সাজেদুর রহমানকে টাকা দিয়ে আমরা অনেকেই দুই বছর ধরে ঘুরছি। সাজেদুর বার বার আমাদের আশা দিয়েও বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেনি।
‘আমি ঋণ করে ও গরু বিক্রি করে ওই দালালকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। সম্পূর্ণ টাকা নেয়ার পর এখন সে লাপাত্তা।’
রাজু আহম্মেদ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘কিছুদিন আগে সে আমাদের সবাইকে ফ্লাইটের টিকিট দিয়ে সবার কাছ থেকে ৫ লাখেরও বেশি করে টাকা নেয়। এরপর আমরা সবাই ঢাকায় গিয়ে জানতে পারি ফ্লাইটের টিকিট ও ভিসা ভুয়া। এরপর থেকে ওই দালালকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়িতে গিয়েও পরিবারের কারও দেখা পাওয়া যায় না। বাড়ি তালা দেয়া।
আমরা যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ করে টাকা দিছি তাদের অনেকেই ওই টাকা পরিশোধ করতে না পেরে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকি।’
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘জমি, মায়ের স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বেঁচে থাকব না মরে যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা চাই সরকার আমাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে দ্রুত প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।’
এ বিষয়ে সাজেদুর রহমান নামের ওই দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, যারা টাকা দিয়েছে তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলতে চাই না।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, ‘এরকম ঘটনা আমাদের জানা নেই। ভুক্তভোগীরা কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’