বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা পানি চাই, সীমান্ত হত্যা বন্ধ চাই। তা না করে শেখ হাসিনা শুধুই দিয়েই যাচ্ছেন। উজাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কী পেয়েছে? বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে শুধুই ঘৃণা।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন এই দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র মানেই খালেদা জিয়া। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। দেশনেত্রীকে সাজানো মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
“গ্রেপ্তারের আগে তিনি এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমি জানি আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।’ তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।”
নয়াপল্টনে শনিবার সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: নিউজবাংলা
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, গুম ও হত্যার অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা প্রতিটি নির্বাচনেই তাদের দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমরা নির্বাচন বর্জন করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী না পেয়ে তারা নিজেদের মধ্যে ডামি নির্বাচন করেছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারকে দখলদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অর্থ, ব্যাংক লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান, পুলিশের সাবেক প্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। কিন্তু যারা রাঘব বোয়াল, যারা চুরির হোতা তাদের ধরা হচ্ছে না।’
সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, না হলে যেকোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দলের এতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেল পৌনে ৩টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের জন্য কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপিসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের পদচারণায় নয়াপল্টন সরগরম হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে নয়াপল্টনে নেমেছে নেতাকর্মীর ঢল। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা রকম ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও শীর্ষ নেতাদের ছবিসহ মিছিল সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন।
সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মোতায়েন করা হয় এপিসি (সাঁজোয়া যান), প্রিজন ভ্যান ও জলকামান।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বুধবার সারাদেশে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
এ ছাড়া আগামী ১ জুলাই সব মহানগর এবং ৩ জুলাই সব জেলা সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি।
গত ২২ জুন রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলশানের বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল সফলভাবে তার বুকে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করে। তিনি হাসপাতালের সিসিইউ সুবিধাসহ একটি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
২০২২ সালের ১১ জুন খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লকেজ ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ৯৫ শতাংশ ব্লক হয়ে গিয়েছিল এবং সে সময় স্টেন্ট বসানোর মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়েছিল।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। পরে ওই বছরই আরেকটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তার গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশত্যাগ না করার শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার।
২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তার চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
গত বছরের ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি জমে যাওয়া ও লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস প্রসিডিউর) নামে পরিচিত হেপাটিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।