মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে একসময় যেতে চেয়েছিলেন বিদেশে, তবে পেঁয়াজু ও শিঙাড়ার দোকানে ধীরে ধীরে ভোক্তা বাড়তে থাকায় তাকে আর যেতে হয়নি প্রবাসে।
দোকানে দুই ধরনের খাদ্যপণ্য বিক্রি করে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন এ ব্যক্তি। দূরদুরান্ত থেকে লোকজন আসছেন তার বানানো পেঁয়াজু ও শিঙাড়া খেতে।
ক্রেতারা বলছেন, এখানকার পেঁয়াজু অন্যান্য স্থানের চেয়ে মচমচে ও বেশি সুস্বাদু। একবার খাওয়ার পর নিয়মিত আসেন অনেকে।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার ভোজনরসিকরা দোকানটিতে আসেন পেয়াজু ও শিঙাড়ার স্বাদ নিতে।
সড়কের পাশেই চেয়ার-টেবিলে পরিবশেন করা হয় শিঙাড়া ও পেঁয়াজু। অনেকে আবার দাঁড়িয়ে খেতে থাকেন।
ক্রেতার কমতি না থাকায় বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয়ে পেঁয়াজু ও শিঙাড়া বিক্রি চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
স্থানীয় ক্রেতাদের জন্য ছোট্ট দোকানটির মধ্যে চোকি দিয়ে বানানো হয়েছে বসার স্থান।
পেঁয়াজুতে বাজার থেকে কেনা বেসন ব্যবহার করেন না আবদুস সালাম। প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে নিজেই মিল থেকে পিষে আনেন বেসন। পেঁয়াজের পরিমাণ বেসনের চেয়ে বেশি হওয়ায় বেশ মুখরোচক হয় পেঁয়াজু।
ব্যবসায় আবদুস সালামকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই পুত্রবধূ। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার পেঁয়াজু ও শিঙাড়া বিক্রি হয় দোকানটিতে।
যা বললেন আবদুস সালাম ও তার ছেলে
এ ব্যবসায়ী ও তার ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোকানে শিঙাড়া ও পেঁয়াজু বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে আয় হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।
আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি ২৮ বছর ধরে এই ব্যবসার সাথে জড়িত। মূলত গ্রামের বিয়ে কিংবা খানা বাড়িতে রান্নাবান্নার জন্য দাওয়াত পেতাম, তবে রান্নার অনুষ্ঠান তো আর প্রতিদিন হয় না। সেই ফাঁকে গ্রামের বাজারে বড়া (পেঁয়াজু) ও শিঙাড়া ভাজা শুরু করি। বতর্মানে সেটাই পেশায় পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিদিন আমার গড়ে ১৪০০ পিস শিঙাড়া ও ৪৫ কেজি করে পেঁয়াজ লাগে।
‘এই কাজে আমার দুই বেটার বউ, ছেলে ও আমার স্ত্রী সহযোগিতা করে থাকে। আমাদের পরিশ্রমটা একটু বেশিই হয়। কেননা খাবারের মান ভালো রাখার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিছন্নতার জন্য বাড়তি সময় ব্যয় করা লাগে।’
তিনি বলেন, ‘একটা সময় আমি আয়ের জন্য বিদেশ যাওয়ার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন আল্লাহ খুব ভালো রেখেছে। আয়-রোজগারও বেশ ভালোই হয়। ছেলেপিলে নাতিপুতি নিয়ে খুব ভালোই আছি।’
আবদুস সালামের বড় ছেলে জুয়েল বলেন, ‘আমাদের এ বড়ার দোকান বেশ ভালোই চলে। দুপুর থেকে শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের দম ফেলার সুযোগ থাকে না। ১৩০০-১৪০০ পিস করে শিঙাড়া তৈরি করা এবং এক-দেড় মণ করে বড়া ভেজে বিক্রি করাটা সহজ কথা না। মাথার ঘাম পায়ে পড়ে যায়। আমাদের প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
‘আমাদের এখানে অনেক দূর থেকেও মানুষ বড়া, শিঙাড়া খেতে আসে। আব্বা তো মাঝে বড়া, শিঙাড়া ভাজার কাজ করতে করতে মাজার (কোমর) সমস্যায় দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সে কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসা বন্ধ রেখেছিলাম। দোকানটি এখন আমাদের পরিবারের সকলের আয়ের উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’
ভোক্তাদের ভাষ্য
পেঁয়াজু খেতে আসা কৃষক আসমান আলী বলেন, ‘আমরা সারা দিন মাঠে কাজ করি। বিকেল হলেই সব কাজ সেরে সালাম ভাইয়ের পেঁয়াজুর দোকানে চলে আসি।
‘এলাকায় অনেক জায়গায় পেঁয়াজু ভাজে, তবে সালাম ভাইয়েরটার স্বাদ পুরাটাই ভিন্ন। এর স্বাদ কারোর সাথে মেলে না।’
বেশ দূর থেকে পেঁয়াজু খেতে আসা সামিউল বলেন, ‘আমি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে পেঁয়াজু, শিঙাড়া খেতে এসেছি। মূলত আমি এক ফেসবুক আইডিতে এ দোকানের পেঁয়াজুর স্বাদ সম্পর্কে জেনে ছিলাম।
‘আর আজ এসে খেয়ে দেখলাম। এককথায় সত্যিই অসাধারণ। না খেলে হয়তো এর স্বাদ বোঝা সম্ভব হবে না।’
গৃহবধূ জরিনা বলেন, “আমার মেয়ে বিকেল হলেই বলবে, ‘মা, শিঙাড়া খাব।’ আর না খেয়ে থামবে না। বাড়ির পাশে হওয়ায় আমি নিজেই এসে কিনে নিয়ে যাই।
“মেয়ের জন্য আমাদের খাওয়া হয়ে যায়। সত্যি বলতে এই দোকানের স্বাদ সব জায়গার থেকে আলাদা।”