বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নওগাঁয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মূত্রথলিতে পাথর রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ

  • প্রতিনিধি, নওগাঁ   
  • ২৭ জুন, ২০২৪ ১৬:০৯

শহরের প্রাইম ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর হাসপাতালের কিডনি ও ইউরোলজি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন গোলাম সাকলাইনের বিরুদ্ধে।

নওগাঁয় এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অস্ত্রোপচার করা ব্যক্তি।

শহরের প্রাইম ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সদর হাসপাতালের কিডনি ও ইউরোলজি রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন গোলাম সাকলাইনের বিরুদ্ধে।

কী আছে অভিযোগে

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, নওগাঁ সদরের পার নওগাঁ সরদারপাড়া গ্রামের রিকশাচালক আবদুল মালেক প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ও ব্যথার সমস্যা নিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে যান চিকিৎসক গোলাম সাকলাইনের কাছে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাকলাইন বলেন, প্রস্রাবের থলিতে পাথর জমেছে; দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। শহরের প্রাইম ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে স্বল্প খরচে অস্ত্রোপচার করে দেবেন বলে পরামর্শ দেন তিনি।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচারের জন্য গত ৭ মে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন আবদুল মালেক। ভর্তির পর ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে অস্ত্রোপচার করেন গোলাম সাকলাইন।

রোগীর অভিযোগ, চিকিৎসক মূত্রথলি থেকে কোনো পাথর বের করতে পারেননি। অবস্থা বেগতিক দেখে বিশেষজ্ঞ সার্জন মুক্তার হোসেনের সহায়তা চাইলে অপারেশন থিয়েটারে আসেন মুক্তার।

তিনি রোগীর অবস্থা দেখে জানান, এটি মেশিনের সাহায্যে অস্ত্রোপচার করতে হবে। খালি হাতে পাথর বের করা সম্ভব নয়। এরপর অস্ত্রোপচারে ব্যর্থ হয়ে সেলাই দেন চিকিৎসক সাকলাইন, কিন্তু ভেতরে একটি পাইপ রেখে দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অস্ত্রোপচারের চার দিন পর রোগীকে ছাড়পত্র দিলে রোগী বাড়িতে চলে আসেন। এরপর শুরু হয় ক্ষতস্থানে প্রচণ্ড ব্যথা ও রক্ত ঝরা। অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েক দিন পর রোগীকে নিয়ে রাজশাহী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানে পুনরায় মেশিনের সাহায্যে অস্ত্রোপচার করে মূত্রথলি থেকে পাথর বের করা হয়।

রিকশাচালক আবদুল মালেক উল্লেখ করেন, ফের চিকিৎসা করাতে তার আরও প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বিষয়ে তার মা ও দুজন আত্মীয়কে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান অর্থিক ক্ষতির বিষয়ে কথা বলতে, কিন্তু কথা বলার একপর্যায়ে চিকিৎসক গোলাম সাকলাইন ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীকে মারধর ও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন। এরপর আবদুল মালেক ২৫ জুন বিকেলে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সিভিল সার্জনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, অস্ত্রোপচারে ব্যর্থতা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানান আবদুল মালেক।

ঘটনার বিষয়ে রিকশাচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘ডাক্তার গোলাম সাকলাইন আমার মূত্রথলিতে অপারেশন করার পর থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। আর প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। ঘটনার বেশ কয়েক দিন পর আবার ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি স্বীকার করেন মূত্রথলি থেকে পাথর বের করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ভেতরে একটি পাইপ রেখে দেয়।

‘আমার মা ও দুইজন আত্মীয়কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই অর্থিক ক্ষতির বিষয়ে কথা বলতে। কথা বলার একপর্যায়ে গোলাম সাকলাইন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও আমার মাকে মারধর ও ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের হুমকি দেয়। আমার ব্যথা ও রক্ত পড়া বন্ধ না হলে রাজশাহী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে পুনরায় অপারেশন করে একটি বড় পাথর ও পাইপ বের করেন সেখানকার চিকিৎসক।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দুইবার অপারেশন করার ফলে আমার শারীরিক ও আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এ বিষয়ে নওগাঁর সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

আবদুল মালেকের মা মালেকা বেগম বলেন, “আমার ছেলের মূত্রথলির অপারেশন করে পাথর বের না করেই সেলাই করে ডাক্তার গোলাম সাকলাইন। পরে তার কাছে গেলে ভুল অপারেশনের কথা স্বীকার করে বলে, আবার মেশিন দিয়ে অপারেশন করে পাথর বের করে দেবে, কিন্তু দিনের পর দিন আমার ছেলের রক্ত পড়া ও ব্যথা বেড়ে যায়।

“তার কাছে সর্বশেষ যেদিন গিয়েছিলাম, সেদিন ডাক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে ‘তোদের মেরে নওগাঁ ছেড়ে চলে যাব’ বলে আমাদের বের করে দেয়। তারপর রাজশাহীর একটি হাসপাতালে আবার অপারেশন করাই আমার ছেলেকে।”

তিনি আরও বলেন, ‘একজন ডাক্তার যদি রোগীর ভুল অপারেশন করে তাহলে কীভাবে আমরা ডাক্তারদের বিশ্বাস করব? আবার সুরাহার জন্য গেলে মেরে ফেলার হুমকি-ধমকি দেয়। এমন অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’

সংবাদকর্মী পরিচয়ে গোলাম সাকলাইনের চেম্বারে গিয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “‘হু আর ইউ’ (কে আপনি)? আমি আপনার কাছে কেন মন্তব্য করব?”

এরপর ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপারেশনটা ক্রিটিক্যাল ছিল। তাই আমি করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। এটা মেশিন ছাড়া হবে না।

‘তাদের বলেছিলাম, ১৫ দিন পর মেশিনের সাহায্যে করে দেব, কিন্তু তারা রাজশাহীতে চলে যান।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আগে রোগী বা লোকজনের সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি। তারা এসে আগে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। ‘তখন আমি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। রোগীর মুখ থেকে পুরো ঘটনাটি জেনেছি। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘আর রোগী বা সংবাদকর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ— এটা নিঃসন্দেহে খারাপ কাজ। এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করব।’

এ বিভাগের আরো খবর