নওগাঁর বদলগাছীতে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও পারিবারিক শক্রতার জেরে বদলগাছী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ছাগল চুরির অপবাদ এনে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত নেতা সানাউল হক হিরো।
একই এলাকার জাহেরা বেগম নামে এক নারী শুক্রবার তাকে বিবাদী করে থানায় ছাগল চুরির অভিযোগ করেন। এরপর কিছু সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে হয়রানির জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি ওই কৃষকলীগ নেতার।
বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সানাউল হক বর্তমানে বদলগাছী উপজেলার কৃষকলীগের সভাপতি।
স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকার বাসিন্দা চা দোকানি জাহেরা বেগমের সঙ্গে ছানাউল হোসেন হিরোর পারিবারিক বিষয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে গত শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে জাহেরা বেগমের আনুমানিক ২৬ হাজার টাকা মূল্যের একটি ছাগল (খাসি) বিবাদী হিরোর বাড়ির গেটে গেলে এরপর ছাগলটি (খাসি) অনেক খোঁজাখুঁজি করে পায়নি ভুক্তভোগী ওই নারী। পরে বিভিন্নভাবে তিনি জানতে পারেন, ছাগলটি চুরি করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন হিরো।
এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে সব কিছুতে অস্পষ্টতা চোখে পড়েছে নিউজবাংলার। অভিযোগপত্রে উল্লিখিত সাক্ষী ও বিবাদীদের কেউেই ছাগল চুরির বিয়টি স্বচক্ষে দেখেননি। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বিবাদীকে অভিযুক্ত করেছেন ছাগলের মালিক জাহেরা বিবি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা রতন ও শাহীনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তারা বলেন, জাহেরা বেগমের সঙ্গে উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি সানাউল হক হিরোর সঙ্গে বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে। এর আগেও জাহেরা বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগ দিয়ে হিরোকে হয়রানি ও সন্মানহানির চেষ্টা করেছে।
অভিযোগপত্রে উল্লিখিত সাক্ষীদের অন্যতম স্থানীয় বাসিন্দা সানজিদা বলেন, ‘আমরা ছাগল চুরির ব্যপারে কিছুই জানি না। কে বা কারা নিয়েছে বলতে পারছি না। তবে ছাগলটিকে হিরোর বাড়ির সামনে তার ছাগলের সঙ্গে দেখেছিলাম। একটু পর শুনি, ছাগল নাকি হারায় গেছে। আমি ছাগলটাকে হিরোর বাড়ির সামনে দেখেছিলাম, এটুকুই ছাগল মালিককে বলেছি। তবে ছাগল চুরির বিষয়টি আমি নিজ চোখে দেখিনি।’
স্থানীয় আবু বক্কর পলাশ বলেন, ‘এ এলাকায় নেশাখোর বা মাদকসেবীরা প্রতিনিয়ত এসব কাজ করে। এটা তাদের কাজও হতে পারে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহেরা বেগম বলেন, ‘হিরোর সঙ্গে আমাদের পরিবারের অনেক দিনের ঝামেলা। এর আগে, ঈদের সময় তার সঙ্গে ঝামেলা ও ঝগড়া হলে আমার ছাগল হারিয়ে যায়; এবারও একই ঘটনা ঘটেছে।’
ছাগল চুরি করতে তিনি নিজে বা সাক্ষীরা কেউ দেখেছেন কি না- জানতে চাইলে এই নারী বলেন, ‘ছাগল চুরি করতে আমি বা যে সাক্ষীর নাম দিয়েছি অভিযোগপত্রে তারা কেউ দেখেননি। তবে আমার সন্দেহ যে, হিরোই ছাগল চুরি করেছে। তার সঙ্গে ঝগড়া হলেই এর দুদিন বাদে আমার জিনিস হারায়। সেই সন্দেহের বসে আমি তার নামে অভিযোগ করেছি।’
তবে অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে সানাউল হক হিরো বলেন, ‘আমাকে সামাজিকভাবে হয়রানি করার জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে, যা সাজানো নাটক। বংশগতভাবে এবং ব্যবসা করে যা আয় উর্পাজন করি, তা-ই আমার ও পরিবারের জন্য যথেষ্ট। অন্যের ছাগল কেন ছুরি করতে যাব?’
প্রতিবেশী জাহেরার সঙ্গে পূর্বশত্রুতার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমার নামে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। এই মহিলা অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির মানুষ। বিভিন্নভাবে মানুষের নামে অভিযোগ দিয়ে তাদের হয়রানি করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তে আমার বিরুদ্ধে চুরির এই অভিযোগ করেছে সে (জাহেরা)। এই মিথ্যা অভিযোগের ফলে পরিবার নিয়ে আমি অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। আমি চাইব, এই ঘটনার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হোক।’
বদলগাছী থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জাহেরা বেগম নামের একজন ছাগল চুরির ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। যতটুকু জেনেছি, তাদের মধ্যে পারিবারিক গণ্ডগোল আছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে । শিগগিরিই ছাগল চুরির সঠিক কারণ জানা যাবে।’