ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষ এখন ঢাকামুখী। গ্রামে যাওয়া নগরের মানুষগুলো ফিরছে কর্মস্থলে। আর রাজধানী ফিরে পাচ্ছে তার ব্যস্ততম চেহারা।
বাস ও ট্রেনের পাশাপাশি সরকারি ছুটির দিনে শুক্রবার রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে মানুষের ঢাকা ফেরার চিত্র। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের সব লঞ্চ ডেকে পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়েছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়েও কিছু লঞ্চ ঢাকার এসে পৌঁছায়। নৌপথ ছাড়াও অনেকে আবার সড়ক অথবা রেলপথে ফিরছেন।
ঈদের পর শহরে ফেরা মানুষে আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষজনের চিরচেনা নৌবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। লঞ্চের হর্ন আর যাত্রীদের পদচারণায় সদরঘাট তার পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পন্টুনগুলোতে ছিলো ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড়। কেউ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ফিরছেন। কেউবা ফিরছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কারও সঙ্গে রয়েছে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যাগ।
তবে লঞ্চের মাধ্যমে ঢাকামুখী এ যাত্রায় এখনও কোনো অনিয়ম বা বড় ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার দুপুর থেকে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, চরফ্যাশন, হুলারহাট, ভান্ডারিয়া, লালমোহনসহ দেশের বিভিন্ন রুটের যাত্রী বোঝাই লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনালে লঞ্চ এবং নগরমুখো যাত্রীও বাড়তে থাকে।
চাঁদপুর থেকে আসা ‘এমভি রহমত’ নামের একটি লঞ্চ সদরঘাটে আসে বিকেল ৩টায়। লঞ্চটিতে বৃহস্পতিবারের চেয়ে যাত্রীর ভিড় তুলনামূলক বেশি ছিল।
এই লঞ্চের যাত্রীরা বলেন, যাদের রোববার থেকে অফিস রয়েছে তারা এ দুদিনের মধ্যেই ঢাকায় ফিরবেন। ফলে এ দুদিন একটু চাপ বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
দুপুরে ভোলা থেকে ছেড়ে আসা ঈগল-৪ লঞ্চটি ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে শুরু করেন।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার থেকে অফিস-আদালত, মার্কেট সবকিছু খোলা হবে। এজন্য তারা ঢাকায় চলে এসেছেন।
ভাড়া কেমন নিয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখন তো ঈদের সিজন। ভাড়া তো একটু বেশি নেবেই। মানুষ ঢাকায় ফিরছে, ভাড়া তেমন একটা বেশি নেয়নি।
ভোলা থেকে আসা বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরলাম। আসতে তেমন কোনো ভোগান্তি হয়নি। ভালোভাবেই পৌঁছে গেছি।’
এদিকে সদরঘাট দিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া সংখ্যা খুব কম দেখা গেছে। লঞ্চ কর্মকর্তারা জানান, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই একে একে ভিড়তে থাকে বিভিন্ন রুটের লঞ্চ। এদিন বরিশাল নদীবন্দর থেকে বেশ কয়েকটি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনালে এসে পৌঁছেছে।
ঈদযাত্রার পর মানুষ এখন আর তেমন বাড়ি যাচ্ছে না। এখন সবাই ফিরছে। সরকারি ছুটির এই দুদিন কর্মস্থল ঢাকায় ফিরতে লঞ্চে মানুষের বাড়তি চাপ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাহাজ মালিক, স্টাফ ও কর্মকর্তারা।
ঈদের ছুটির আগের দুদিন ১৪ ও ১৫ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর ১৬ থেকে ১৮ জুন তিনদিন ছিল ঈদের ছুটি। পরবর্তীতে ১৯ ও ২০ জুন অফিস-আদালত খুললেও অনেকেই এ দুদিন বাড়তি ছুটি কাটিয়েছেন।
ঈদের নির্ধারিত ছুটি শেষে বুধ ও বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিয়েছেন অনেকে। তবে পুরোদমে ফেরেনি কর্মচাঞ্চল্য।
যাত্রীর মূল চাপটা ২১ ও ২২ জুন (শুক্রবার, শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে থাকবে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা। এই ছুটি শেষে ২৩ জুন রোববার থেকে রাজধানী ফিরে যাবে চিরচেনা সেই আগের রূপে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগের কর্মকর্তা এস এম মামুন জানান, ঈদের ছুটি শেষে যেমন যাত্রী থাকার কথা তেমনই হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যেমন থাকে তার চেয়ে বেশি যাত্রীই লক্ষ্য করা গেছে।
বিআইডব্লিটিএ’র বাদিং সারেং আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খুব সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৮টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। বৃহস্পতিবার একই সময়ে ৬১টি লঞ্চ রাজধানীতে এসেছিল। এদিন আসা প্রায় সব লঞ্চ ঢাকায় যাত্রী রেখে দ্রুত টার্মিনাল ত্যাগ করেছে।
‘লঞ্চগুলো হলো- এম ভি সুন্দরবন ১৬, মানামী, অ্যাডভেঞ্জার ১ ও ৯, সুন্দরবন ১০ ও ১৪, প্রিন্স আওলাদ ৭, এম ভি কুয়াকাটা ২, প্রিন্স রাসেল ৫, শুভরাজ ৯ ইত্যাদি। বেশ কয়েকটি স্পেশাল সার্ভিসের লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লম্বা ছুটি থাকায় মানুষ ধাপে ধাপে ফিরছে। বিগত দুদিনের তুলনায় রাজধানীতে ফেরা মানুষের চাপ শুক্রবার কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ কাজের টানে ফিরে আসবে।’
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘৪০টি নৌরুটে দিন ও রাত্রিকালীন সার্ভিস মিলিয়ে শতাধিক লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা রুটে সরাসরি যাতায়াত করছে। তবে বিশেষ লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীর চাহিদা বিবেচনা করে চলাচল করে। সাধারণ সময়ে লঞ্চগুলো বাই রোটেশন তালিকা অনুসারে চলাচল করবে।’
সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার ওসি মো. আবুল কালাম বলেন, ‘সদরঘাট এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ঘাট ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) সকাল থেকেই ঘাটে লঞ্চ আসতে শুরু করেছে। কিছু লঞ্চ আবার সদরঘাট ছেড়েও গেছে। পুলিশ বাহিনী সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’