নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে মাদ্রাসাছাত্র খুনের ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। নিহত ১৪ বছরের মান্নান মেহেরাজের মরদেহের সর্বাংশে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকলেও খুনি কে, তা এখনও বের করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি, এ ঘটনায় নিহতের পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করতে অব্যাহত হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বুধবার বিকেলে নাটেশ্বর ইউনিয়নের দারুল আরকাম ইসলামিয়া মাদ্রাসার পুকুর থেকে নাজেরা বিভাগের ছাত্র মেহেরাজের মরদেহ ভেসে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মরদেহের মাথা থেকে বুক পর্যন্ত বস্তাবন্দি ছিল। পঁচা-গলা মরদেহটি মাদ্রাসার মোহতামিমের নির্দেশে পুকুর থেকে তুলে আনে ছাত্ররা।
এ ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রের পরিবার গত শুক্রবার (১৪ জুন) হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে। অপরদিকে, মাদ্রাসা রোববার (১৬ জুন) এই ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ ভিত্তিহীন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে কর্তৃপক্ষ।
নিহতের বাবা মো. কামাল বাদী হয়ে হত্যার অভিযোগে শিক্ষক আহসান হাবিবকে আসামি করে ৫ জনের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬ নম্বর আমলি আদালতে মামলা করেন। আগামী বুধবার (২৬ জুন) এ মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত মান্নান মেহেরাজ তার নাজেরা বিভাগের শিক্ষক আহসান হাবিবকে আরেক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বলাৎকার করার ঘটনা দেখে ফেলে। ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে আব্দুল মান্নানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, মাদ্রাসার পুকুর থেকে মেহেরাজের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন মোহতামিম মহিন উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে তার দাবি ছিল, এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা। ছেলেটি পানিতে পড়ে মারা গেছে।
এসময় ছাত্র নিহতের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
গত শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে উপজেলার উত্তর মির্জানগর মন্ত্রীর মসজিদের সামনে ভুক্তভোগী পরিবার মানববন্ধন করে।
এসময় তারা উল্লেখ করেন, নাজেরা বিভাগের শিক্ষক আহসান হাবিব আরেক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বলাৎকার করার ঘটনা দেখে ফেলায় খুন করা হয় মান্নান মেহেরাজকে। এছাড়া গত সোমবার (১০ জুন) থেকে মেহরাজ নিখোঁজ থাকলেও তার পরিবারকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি, থানা থেকে মামলা নেয়া হয়নি। আদালতে মামলা করায় তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
তবে সোনাইমুড়ী থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, মরদেহটি মাদ্রাসার পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ছেলেটি পানিতে ডুবে মারা গেছে।
নিহতের বড়ভাই মো. হানিফ বলেন, ‘পানি থেকে উদ্ধার করার পর দেখতে পাই, মেহরাজের মরদেহের ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল ক্ষতবিক্ষত। দুই পায়ের উরুতে হাতের ছাপ ও গলায় আঙুলের ছাপ রয়েছে।
তিনি জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে, সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গত মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে পানিতে ডুবে গেছে মান্নান। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা বক্তব্য দিয়েছে, এ ঘটনার একদিন আগে থেকেই মান্নান নিখোঁজ। আর নিখোঁজের ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও তা তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়নি।
এছাড়া, সিসি টিভি ফুটেজ অনুযায়ী, সোমবার দুপুরে পানিতে ডুবে পরদিন বিকেলে মরদেহ ভেসে ওঠে। মরদেহ দেখতে পেয়েও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে কিংবা নিহতের পরিবারকে কিছুই জানায়নি। পরে প্রতিবেশীর মাধ্যমে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা জানতে পেরে মাদ্রাসায় গিয়ে মরদেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
অন্যদিকে, পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ‘হার্ডডিস্ক মাইজদিতে রয়েছে’ জানায়। এর দুই ঘণ্টা পর মাইজদি থেকে হার্ডডিস্ক এলে সিসি টিভি ফুটেজ দেখানো হয় পুলিশকে।
এদিকে, নিহত মাদ্রাসা ছাত্র মান্নান মেহেরাজ সাঁতার জানত বলে জানিয়েছেন তার ভাই মো. হানিফ।