বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ

  • প্রতিবেদক, সিলেট ও প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ   
  • ১৮ জুন, ২০২৪ ২০:১৯

সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বাড়ছে প্লাবিত এলাকা। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।

টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। দুই জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। সিলেটে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ।

সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে মঙ্গলবার দুপুরে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শহরের কাঁচাবাজারে হাঁটুর উপরে পানি। পশ্চিম বাজার, মধ্যবাজারে বন্যার পানি উঠছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শহরে পানি ঢুকছে।

সিলেটে এবার ২০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল। ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন অবস্থায় আছে সিলেট নগরও। নগরের অনেক রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেড়েই চলেছে পানি।

বন্যার পানিতে দুর্যোগের নগরীতে পরিণত হয়েছে সিলেট। ছবি: নিউজবাংলা

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সিলেটের চারটি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার রাত পর্যন্ত সিলেট জেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দুই লক্ষাধিক।

বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিন কুরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর মঙ্গলবার সকল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৪৪ মিলিমিটার। আর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১২ মিলিমিটার।

আগামী দুদিনও সিলেটে টানা বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে ঢলের পানিতে ২৭ মে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ফের বন্যাকবলিত হলো সিলেট।

সুনামগঞ্জ জেলা শহরের মূল সড়কে বন্যার দুর্ভোগ। ছবি: নিউজবাংলা

বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বাড়ছে প্লাবিত এলাকা। ইতোমধ্যে জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার মামার দোকান এলাকার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রবল বেগে ঢলের পানি নামছে। এলাকার অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে।’

সিলেট নগরে সোমবার ঈদের সকালে টানা বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় সিলেটে বৃষ্টিপাত। এর প্রভাবে আবারও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নগরে।

নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা কাইয়ুম আহমদ বলেন, ‘পানিতে বাসা ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কাল কোরবানি দিতে পারিনি। আজ (মঙ্গলবার) পরিস্থিতি আরও খারাপ। পানি দ্রুত বাড়ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

ডুবেছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। ছবি: নিউজবাংলা

এছাড়া নগরের মধ্যে অনেক সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।

বাপাউবো সিলেট কার্যালয় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানায়, এ সময় পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা থেকে ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে।

কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারিগোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।’

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে মঙ্গলবার দুপুরে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

শহরের কাঁচাবাজারে হাঁটুর উপরে পানি। পশ্চিম বাজার, মধ্যবাজারে বন্যার পানি উঠছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শহরে ঢুকছে পানি।

বড়পাড়া, তেঘরিয়া থেকে শুরু করে নবীনগর, ধারারগাঁও পর্যন্ত নদী পাড়ের সব সড়ক ও হাট-বাজারে দেড় থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শহরবাসী।

নদীপাড়ের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে উঠেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে- পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এমন তথ্যে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষের বসতঘরে পানি উঠে গেছে।

ছাতকে বিপদসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুরে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

অপরদিকে পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাাবিত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুরের দেড় শতাধিক গ্রাম। নতুন করে পানি বাড়ায় বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাইসহ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলাতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার, ছাতকে বিপদসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুরের শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সেজন্য পানি বিপদসীমার উপরে থাকতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘নদী টইটম্বুর অবস্থায় রয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকা এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আগামী দুদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

‘ইতোমধ্যে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।’

সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। এই দুঃসময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে সবাইকে থাকার আহবান জানাচ্ছি।’

ইন্ডিয়া মেটেরিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে দ্রুত বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি।

এ বিভাগের আরো খবর