সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত ছাড়াই মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে পাহাড়ি ঢলের পানি। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে মঙ্গলবার দুপুরে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার বা ২ দশমিক ২৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
শহরের কাঁচাবাজারে হাঁটুর উপরে পানি। পশ্চিম বাজার, মধ্যবাজারে বন্যার পানি উঠছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শহরে ঢুকছে পানি।
বড়পাড়া, তেঘরিয়া থেকে শুরু করে নবীনগর, ধারারগাঁও পর্যন্ত নদী পাড়ের সব সড়ক ও হাট-বাজারে দেড় থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শহরবাসী।
নদীপাড়ের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে উঠেছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে- পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এমন তথ্যে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষের বসতঘরে পানি উঠে গেছে।
ছাতকে বিপদসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুরে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাাবিত ছিল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুরের দেড় শতাধিক গ্রাম। নতুন করে পানি বাড়ায় বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর, দিরাইসহ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলাতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার, ছাতকে বিপদসীমার ১৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুরের শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সেজন্য পানি বিপদসীমার উপরে থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের লাউড়েরগড় পয়েন্টে ১৫৯ মিলিমিটার, ছাতকে ৯৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ পৌর শহরে ৬৮ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘নদী টইটম্বুর অবস্থায় রয়েছে। পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকা এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও আগামী দুদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘ইতোমধ্যে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।’
সুনামগঞ্জ সদর-বিশ্বম্ভরপুর আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। এই দুঃসময়ে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে সবাইকে থাকার আহবান জানাচ্ছি।
‘ইতোমধ্যে সব আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। সার্বিক সহযোগিতার জন্য সরকারের উচ্চ মহলে জানিয়েছি। আমি সকাল থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। বিপদে সবাইকে ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।’