বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের ঈদের আনন্দ ম্লান

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২৪ ২০:৩৩

পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছে। বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কোরবানির পশু দ্বীপে নেয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু দ্বীপবাসীর ঈদের আনন্দে ভর করেছে শঙ্কা।

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। অথচ এই উৎসবের আনন্দ স্পর্শ করছে না দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত এখনও চলছে। আর এই সংঘাতে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দিকে ছোড়া হচ্ছে গুলি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১০ দিন ধরে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। মাঝে একদিন চলাচল করলেও আবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেন্টমার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটে পড়েছে। বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মো. সাদ্দাম হোসেন রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভয়াবহ অবস্থায় আছি। কাল ঈদ। কোরবানির প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু ১০ দিন ধরে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে নৌ-চলাচল বন্ধ। টেকনাফ থেকে গরু আনতে পারি নাই। তাই ঈদ আনন্দ শেষ হয়ে গেছে।

‘শতাধিক পরিবারে এখন এমনই চিত্র। মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে এসব পরিবারে ঈদের এই সময়টাতেও আতঙ্ক ভর করেছে। প্রতি বছর সেন্টমার্টিনে চার শতাধিক গরু কোরবানি হতো। এ বছর সম্ভব হয়নি। এখানে আমরা যেন জীবন-মরণ যুদ্ধের মধ্যে আছি।’

দ্বীপের আরেক বাসিন্দা মোনাফ বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে এসে প্রতি বছর ভাগে হলেও কোরবানি দিতাম। এবার সম্ভব না। গত বছর সাতজন মিলে ৭০ হাজার টাকায় একটি গরু কোরবানি দিয়েছিলাম।

‘এ বছরও কোরবানির প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ১০ দিন আগে টেকনাফে একটা গরু দেখে আসছি। হঠাৎ নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রলার দেখলেই মিয়ানমার থেকে গুলি ছোড়ে। এ কারণে কোরবানির সামর্থ্য থাকলেও এবার দিতে পারতেছি না।’

সেন্টমার্টিনে ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে মিয়ানমারে যুদ্ধের কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ। এখানে পর্যটক আসলে আমাদের ঘর-সংসার চলে। তা থেকেও দ্বীপের মানুষ বঞ্চিত।

‘এই দ্বীপে বেশিরভাগ মানুষের পেশা হচ্ছে মাছ শিকার। ৬৫ দিন সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ শিকারও বন্ধ রয়েছে। আবার এ মাসে এসে নাফ নদ বন্ধ করে রেখেছে মিয়ানমার। গত ১০ দিন ধরে নৌ-রুট বন্ধ। এ কারণে এবার দ্বীপের মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। তবুও ঈদ আনন্দ উদযাপনের অপেক্ষায় সেন্টমার্টিন।

সেন্টমার্টিনের কলেজ শিক্ষার্থী আক্কাস উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে দ্বীপে ৫/৬টি পশুর হাট বসলেও বড় আকারের গরু কিনতে যেতে হয় টেকনাফ বা শাহপরীর দ্বীপে। সেখান থেকে ট্রলারে করে দ্বীপে আনা হয় গরু।

বর্তমান অবস্থায় তা কি আদৌ সম্ভব? অথচ আগের বছরও দ্বীপে তিন শতাধিক গবাদি পশু কোরবানি দেয়া হয়। এই সংখ্যা এবার খুব বেশি হলে ২০-২৫টা হবে। আমাদের ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিছে মিয়ানমার।’

সেন্টমার্টিনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এবার সেন্টমার্টিনে কোনো ঈদের আমেজ নেই। সর্বত্র শুধু মিয়ানমারের আতঙ্ক। টাস করে ট্রলারে গুলি করে এবং মাঝে মধ্যে বিকট গুলির শব্দ আসে। এ অবস্থায় কিভাবে ঈদের আনন্দ থাকবে?’

তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌরুটে গত দুশ বছর ধরে নিরাপদ যাতায়াত থাকলেও মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে ছোড়া গুলির অজুহাতে সমুদ্র ও নাফ নদের চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর এমন কষ্টে দিন কাটাতে চাই না। আমরা এটির স্থায়ী সমাধান চাই।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে কোরবানি উপলক্ষে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য পাঁচটি গরুসহ ভিজিডি, ভিজিএফ, জেলে পরিবারের জন্য ৭৬ টন চাল সেন্টমার্টিনে পাঠানো হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর