টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আাসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট অঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত সিলেটের অন্তত চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে তলিয়ে গেছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনগাট, কানাইঘাট ও ওসমানীনগর।
পুনরায় বাড়তে শুরু করেছে সিলেটের নদ-নদীর পানি। বর্ষণ আর ঢলের কারণে এই অঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর, রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং ইউনিয়নের হাওড় ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক। ফলে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলায় সড়কের ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছনবাড়ি, চিকাডহর, শাহ-আরেফিন বাজার ও জালিয়ারপাড় গ্রাম ইতোমধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। লোকজন বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছে না। ছনবাড়ি-ভোলাগঞ্জ রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবশ্য উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো আগে থেকেই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে দুটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিলেটে সুরমা এবং মলসীদ ও শেওলায় কুশিয়ারা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুটি নদীতেই পানি বাড়ছে।
বাপাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে এভাবে বৃষ্টিপাত অবিরাম চলতে থাকলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে যদি প্রতিদিন দুশ’ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয় তাহলে সিলেটে বড় বন্যার আশঙ্কা প্রবল।’
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৬৬ দশমিক ৫ মিলিমিটার। আর রোববার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় এখানে বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। শনিবার রাতেও সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে। রোববার সকাল থেকে ফের থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
সিলেটে সোমবার ঈদের দিনও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত এবং বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিলেটে ২৭ মে থেকে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহব্যাপী চলমান এ বন্যায় আক্রান্ত হন ১২টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার আগেই সিলেটে ফের দেখা দিয়েছে বন্যা।
এমন পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে সিলেটের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।